পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

నశి রবীন্দ্র-রচনাবলী সঙ্গেই নিবৃত্তিকেও সত্য বলি। চোখের ভিতরে কোনো জিনিস গুজে দেখতে গেলে চোখকেই নষ্ট করি, দেখতেও পাই নে। প্রবৃত্তির সঙ্গেই একান্ত জড়িয়ে যারা সব জিনিস দেখতে চায় তারা প্রবৃত্তিকেও বিকৃত করে, সত্যকেও দেখতে পায় না । আমি বললুম, দেখে নিখিল, ধর্মনীতির সোনাবাধানো চশমার ভিতর দিয়ে জীবনটাকে দেখা তোমার একটা মানসিক বাবুগিরি,—এইজন্তেই কাজের সময় তুমি বাস্তবকে ঝাপসা দেখ, কোনো কাজ তুমি জোরের সঙ্গে করতে পার না। নিখিল বললে, জোরের সঙ্গে কাজ করাটাকেই আমি কাজ করা বলি নে । তবে ? মিথ্যা তর্ক করে কী হবে ? এ-সব কথা নিয়ে নিফল বকতে গেলে এর লাবণ্য ञछे झ्म्न । আমার ইচ্ছে ছিল মক্ষী আমাদের তর্কে যোগ দেয়। সে এ-পর্যন্ত একটি কথা না বলে চুপ করে বসে ছিল। আজ হয়তো আমি তার মনটাকে কিছু বেশি নাড় দিয়েছি। তাই মনের মধ্যে দ্বিধা লেগে গেছে—ইস্কুলমাস্টারের কাছে পাঠ বুঝে নেবার ইচ্ছে হচ্ছে । কী জানি আজকের মাত্রাট অতিরিক্ত বেশি হয়েছে কিনা। কিন্তু বেশ করে নাড়া দেওয়াটা দরকার । চিরকাল যেটাকে অনড় বলে মন নিশ্চিন্ত আছে, সেটা যে নড়ে এইটিই গোড়ায় জানা চাই । নিখিলকে বললুম, তোমার সঙ্গে কথা হল ভালোই হল । আমি আর একটু হলেই এ বইট। মক্ষীরানীকে পড়তে দিচ্ছিলুম। - নিখিল বললে, তাতে ক্ষতি কী ? ও বই যখন আমি পড়েছি তখন বিমলই বা পড়বে না কেন ? আমার কেবল একটি কথা বুঝিয়ে বলবার আছে । আজকাল যুরোপ মানুষের সব জিনিসকেই বিজ্ঞানের তরফ থেকে যাচাই করছে— এমনিভাবে আলোচনা চলছে যেন মাহুষ-পদার্থ ট। কেবলমাত্র দেহতত্ব, কিংবা জীবতত্ত্ব, কিংবা মনস্তত্ব কিংবা বড়োজোর সমাজতত্ত্ব—কিন্তু মানুষ যে তত্ত্ব নয়, মানুষ যে সব-তত্ত্বকে নিয়ে সবতত্ত্বকে ছাড়িয়ে অসীমের দিকে আপনাকে মেলে দিচ্ছে, দোহাই তোমাদের, সে-কথা ভুলো না । তোমরা আমাকে বল, আমি ইস্কুলমাস্টারের ছাত্র—আমি নই, সে তোমরা–মাহুষকে তোমরা সায়ান্সের মাস্টারের কাছ থেকে চিনতে চাও—তোমাদের অন্তরাত্মার কাছ থেকে নয় । আমি বললুম, নিখিল, আজকাল তুমি এমন উত্তেজিত হয়ে আছ কেন ? সে বললে, আমি যে স্পষ্ট দেখছি তোমরা মানুষকে ছোটো করঞ্চ, অপমান করছ ।