পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミcや রবীন্দ্র-রচনাবলী এর পরে আমার কিছু বলবার শক্তি ছিল না। আমার ভয় হতে লাগল এখনই সন্দীপ ছুটে এসে আমার হাত চেপে ধরবেন। কেননা তার হাত চঞ্চল আগুনের শিখার মতোই কঁপিছিল আর তার চোখের দৃষ্টি আমার উপর যেন আগুনের স্ফুলিঙ্গের মতো এসে পড়ছিল। সনদীপ বলে উঠলেন, অfপনার সব ছোটো ছোটো ঘ’রো নিয়মকেই কি বড়ো করে তুলবেন ? আপনাদের এমন প্রাণ আছে যার একটু আভাসেই আমরা জীবনমরণকে তুচ্ছ করতে পারি সে কি কেবল অন্দরের ঘোমটা-মোড়া জিনিস? আজ আর লজ্জা করবেন না, লোকের কানাঘুষায় কান দেবেন না, আজ বিধিনিষেধে তুড়ি মেরে মুক্তির মাঝখানে ছুটে বেরিয়ে আম্বন । এমনি করে সন্দীপবাবুর কথায় দেশের স্তবের সঙ্গে যপন আমার স্তব মিশিয়ে যায়, তখন সংকোচের বাধন আর টেকে না, তখন রক্তের মধ্যে নাচন ধরে । যতদিন আর্ট আর বৈষ্ণব কবিতা, আর স্ত্রী পুরুষের সম্বন্ধনির্ণয়, আর বাস্তব-অবাস্তবের বিচার চলছিল ততদিন আমার মন গ্রানিতে কালো হয়ে উঠেছিল। আজ সেই অঙ্গারের কালিমায় আবার আগুন ধরে উঠল—সেই দীপ্তিই আমার লজ্জা নিবারণ করলে । মনে হতে লাগল আমি যে রমণী সেটা যেন আমার একট। অপরূপ দৈবী মহিমা । হায় রে, আমার সেই মহিম। আমার চুলের ভিতর দিয়ে এখনই কেন একটা প্রত্যক্ষ দীপ্তির মতো বেরোয় না। আমার মুখ দিয়ে এমন কোনো একটা কথা উঠছে না কেন যা মন্ত্রের মতো এখনই সমস্ত দেশকে অগ্নিদীক্ষায় দীক্ষিত করে দেয় ? এমন সময়ে হাউ-মাউ করে কাদতে কঁদিতে আমার ঘরে ক্ষেমাদাসী এসে উপস্থিত। সে বলে, আমার মাইনে চুকিয়ে দাও, আমি চলে যাই, আমি সাতজন্মে এমন—হাউ হাউ হাউ হাউ ! কী ? ব্যাপারটা কী ? মেজোরানীমার দাসী থাকো অকারণে গায়ে পড়ে ক্ষেমার সঙ্গে ঝগড়া করেছে— তাকে যা মুখে আসে তাই বলে গাল দিয়েছে । আমি যত বলি, আচ্ছা সে আমি বিচার করব—কিছুতেই ক্ষেমার কাল্লা আর থামে না । সকালবেলায় দীপক রাগিণীর যে-সুর এমন জমে উঠেছিল তার উপরে যেন বাসন-মাজার জল ঢেলে দিলে । মেয়েমান্তষ যে-পদ্মবনের পঙ্কজ তার তলাকার পক্ষ বুলিয়ে উঠল। সেটাকে সন্দীপের কাছে তাড়াতাড়ি চাপা দেবার জন্তে আমাকে তখনই অস্তঃপুরে ছুটতে হল । দেখি আমার মেজো জা সেই বারান্দায় বসে একমনে