পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミ&b" রবীন্দ্র-রচনাবলী জিনিসটাই আমার জীবনের মধ্যে আর-এক মুর নিয়ে ঢুকেছিল। আমার ভাগ্যদেবতার রথ আসছে, কোথা থেকে তার সেই চাকার শব্দে দিনরাত্রি আমার বুকের ভিতর শুর-গুর করছে। প্রতি মুহূতে মনে হতে লাগল একটা কী পরমাশ্চর্য এসে পড়ল বলে,—তার জন্তে আমি কিছুমাত্র দায়ী নই। পাপ ? যে-ক্ষেত্রে পাপ-পুণ্য, যে-ক্ষেত্রে বিচার-বিবেক, যে-ক্ষেত্রে দয়া-মায়া, সে-ক্ষেত্র থেকে সম্পূর্ণ সরে যাবার পথ হঠাৎ আপনিই যে খুলে গেছে । আমি তো একে কোনোদিন কামনা করি নি, এর জন্তে প্রত্যাশা করে বসে থাকি নি, আমার সমস্ত জীবনের দিকে তাকিয়ে দেখো, এর জন্তে আমার তো কোনো জবাবদিহি নেই। এতদিন একমনে আমি যার পূজা করে এলুম, বর দেবার বেলা এ যে এল আর-এক দেবতা । তাই, সমস্ত দেশ যেমন জেগে উঠে সম্মুখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ ব’লে উঠেছে, বন্দে মাতরং—আমার প্রাণ তেমনি করে তার সমস্ত শিরা-উপশিরার কুহরে কুহুরে আজ বাজিয়ে তুলেছে, বনে—কোন অজানাকে, অপূর্বকে, কোন সকল-স্বষ্টিছাড়াকে । দেশের স্বরের সঙ্গে আমার জীবনের সুরের অদ্ভুত এই মিল! এক-একদিন অনেক রাত্রে আস্তে আস্তে আমার বিছানা থেকে উঠে খোলা ছাদের উপর দাড়িয়েছি । আমাদের বাগানের পাচিল পেরিয়ে আধপাকা ধানের থেত, তার উত্তরে গ্রামের ঘন গাছের ফাকের ভিতর দিয়ে নদীর জল এবং তারও পরপারে বনের রেখা, সমস্তই যেন বিরাট রাত্রির গর্ভের মধ্যে কোন এক ভাবী স্বষ্টির ক্রণের মতো অফুট আকারে ঘুমিয়ে রয়েছে। আমি সামনের দিকে চেয়ে দেখতে পেয়েছি, আমার দেশ দাড়িয়ে আছে আমারই মতো একটি মেয়ে । সে ছিল আপন আঙিনার কোণে—আজ তাকে হঠাৎ অজানার দিকে ডাক পড়েছে। সে কিছুই ভাববার সময় পেলে না, সে চলেছে সামনের অন্ধকারে—একটা দীপ জেলে নেবারও সবুর তার সয় নি। আমি জানি এই স্বপ্তরাত্রে তার বুক কেমন করে উঠছে পড়ছে। আমি জানি, যে-দূর থেকে বাশি ডাকছে, ওর সমস্ত মন এমনি করে সেখানে ছুটে গেছে যে ওর মনে হচ্ছে যেন পেয়েছি, যেন পৌছেছি, যেন এখন চোখ বুজে চললেও কোনো ভয় নেই। না, এ তো মাতা নয়। সস্তানকে স্তন দিতে হবে, অন্ধকারের প্রদীপ জালাতে হবে, ঘরের ধুলো বীট দিতে হবে, সে-কথা তো এর খেয়ালে আসে না। এ আজ অভিসারিকা । এ আমাদের বৈঞ্চব-পদাবলীর দেশ। এ স্বয় ছেড়েছে কাজ ভুলেছে। এর আছে কেবল অন্তহীন আবেগ—সেই আবেগে সে চলেছে মাত্র, কিন্তু পথে কি কোথায় সে-কথা তার মনেও নেই। আমিও সেই অন্ধকার রাত্রির অভিসারিক । আমি ঘরও হারিয়েছি, পথও হারিয়েছি। উপায় এবং লক্ষ্য দুইই আমার কাছে একেবারে