পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে వరి) বাড়ির হিসেব শজনের ডাটা দিয়ে লেখাও চলে। তাও দেখেছি লেখবার বাক্সের মধ্যে ওঁর সেই পুরানো কালের হাতির দাতের কলমটি আছে, যখন কালেভদ্রে লেখার শথ যায় তখন ঠিক সেইটেরই উপর হাত পড়ে । আসল কথা, আমি যে আমার স্বামীর খেয়ালে যোগ দিই নে সেইটের কেবল জবাব দেবার জন্যেই উনি এই কাগুটি করতেন। অথচ আমার স্বামীকে ওঁর এই ছলনার কথা বলবার জো ছিল না। বলতে গেলেই তিনি এমন মুখ করে চুপ করে থাকতেন ষে বুঝতুম যে, উলটো ফল হল । এ-সব মানুষকে ঠকানোর হাত থেকে বাচাতে গেলেই ঠকতে হয়। মেজোরানী সেলাই ভালোবাসেন ; একদিন যখন সেলাই করছেন তখন আমি স্পষ্টই তাকে বললুম, এ তোমার কী কাও । এদিকে তোমার ঠাকুরপোর সামনে দিশি কাচির নাম করতেই তোমার জিব দিয়ে জল পড়ে, ওদিকে সেলাই করবার বেলা বিলিতি কঁাচি ছাড়া যে তোমার এক দগু চলে না । মেজোরানী বললেন, তাতে দোষ হয়েছে কী, কত খুশি হয় বল দেখি ? ছোটোবেলা থেকে ওর সঙ্গে যে একসঙ্গে বেড়েছি, তোদের মতো ওকে আমি হাসিমুখে কষ্ট দিতে পারি নে। পুরুষমানুষ, ওর আর ভো কোনো নেশা নেই—এক, এই দিশি দোকান নিয়ে খেলা, আর, ওর এক সর্বনেশে নেশা তুই—এইখেনেই ও মঙ্গবে ! আমি বললুম, যাই বল, পেটে এক মুখে এক ভালো নয়। মেজোরানী হেসে উঠলেন, বললেন, ওলো সরল, তুই যে দেখি বডড বেশি সিধে, একেবারে গুরুমশায়ের বেত কাঠির মতো—মেয়েমানুষ অত সোজা নয়—সে নরম বলেই আমন একটু-আধটু হয়ে থাকে, তাতে দোষ নেই। মেজোরানীর সেই কথাটি ভুলব না, ওর এক সর্বনেশে নেশা তুই, এইখেনেই ও মজবে । আজ আমার কেবলই মনে হয়, পুরুষমানুষের একটা নেশা চাই কিন্তু সে নেশা যেন মেয়েমানুষ না হয় । আমাদের শুকসায়রের হাট এ-জেলার মধ্যে মস্ত বড়ো হাট। এখানে জেলার এবারে নিত্য বাজার বসে, আর জোলার ওধারে প্রতি-শনিবারে হাট লাগে। বর্ষার পরে থেকেই এই হাট বেশি করে জমে। তখন নদীর সঙ্গে জেলার যোগ হয়ে যাতায়াতের পথ সহজ হয়ে যায়। তখন মুতে এবং আগামী শীতের জন্তে গরম কাপড়ের আমদানি খুব বেড়ে ওঠে। সেই সময়টাতে দিশি কাপড় জার দিশি চুন-চিনির বিরোধ নিয়ে বাংলাদেশের