পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে २8७ তারা দিশি জিনিস কিমুক না । যদি কেনে তো আমি খুশি হব, কিন্তু যদি না কেনে ? সে কী কথা। ওদের এতবড়ো আস্পর্ধ হবে ? তুমি হলে— অামার সময় অল্প, এ নিয়ে তর্ক করে কী হবে । আমি অত্যাচার করতে পারব না । অত্যাচার তো তোমার নিজের জন্যে নয়, দেশের জষ্ঠে,— দেশের জন্যে অত্যাচার করা দেশের উপরেই অত্যাচার করা। সে-কথা তুমি বুঝতে পারবে না। এই বলে আমি চলে এলুম। হঠাৎ আমার চোখের সামনে সমস্ত জগং যেন দীপ্যমান হয়ে উঠল। মাটির পৃথিবীর ভার যেন চলে গেছে, সে যে আপনার জীবপালনের সমস্ত কাজ করেও আপনার নিরস্তর বিকাশের সমস্ত পর্যায়ের ভিতরেও একটি অদ্ভুত শক্তির বেগে দিনরাত্রিকে জপমালার মতে ফেরাতে ফেরাতে যুগে যুগে আকাশের মধ্যে ছুটে চলেছে, সেইটে আমি আমার রক্তের মধ্যে অনুভব করলুম। কর্মভারের সীমা নেই অথচ মুক্তিবেগেরও সীমা নেই। কেউ বাধবে না, কেউ বাধবে না, কিছুতেই বাধবে না। অকস্মাং আমার মনের গভীরতা থেকে একটা বিপুল আনন্দ যেন সমুদ্রের জলস্তম্ভের মতো আকাশের মেঘকে গিয়ে স্পর্শ করলে । নিজেকে বারবার জিজ্ঞাসা করলুম, হঠাৎ তোমার এ হল কী ? প্রথমটা স্পষ্ট উত্তর পাওয়া গেল না, তার পরে পরিষ্কার বুঝলুম, এই কয়দিন যে-বন্ধন দিনরাত আমার মনের ভিতরে এমন পীড়া দিয়েছে আজ তার একটা মস্ত ফাক দেখা গেল । আমি ভারি আশ্চর্য হলুম আমার মনের মধ্যে কোনো ঘোর ছিল না। ফোটোগ্রাফের প্লেটে যে-রকম করে ছবি পড়ে আমার দৃষ্টিতে বিমলার সমস্ত-কিছু তেমনি করে অঙ্কিত হল। আমি স্পষ্ট দেখতে পেলুম বিমলা আমার কাছ থেকে কাজ আদায় করবার জন্যে বিশেষ করে সাজ করেছে। আজকের দিনের পূর্ব পর্যন্ত আমি কখনোই বিমলাকে এবং বিমলার সাজকে তফাত করে দেখি নি। আজ ওর বিলিতি খোপার চুড়াকে কেবলমাত্র চুলের কুণ্ডলী বলেই দেখলুম—শুধু তাই নয়, একদিন এই খোপা আমার কাছে অমূল্য ছিল, আজ দেখি এ সস্তা দামে বিকোবার জন্যে গ্ৰস্তুত । 叠 সন্দীপের সঙ্গে আমার দেশ নিয়ে পদে পদে বিরোধ হয়, কিন্তু সে সত্যকার বিরোধ –কিন্তু বিমলা দেশের নাম করে যে-কথাগুলো বলছে সে কেবলমাত্র সন্দীপের ছায়া দিয়ে গড়া, আইডিয়া দিয়ে নয়,—এই ছায়ার যদি বদল হয় ওর কথারও