পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२¢ ० রবীন্দ্র-রচনাবলী বিমলা আরও স্তম্ভিত হয়ে গেল। খানিক পরে সে বললে, তার টাকা আমি কেমন করে নেব ? আমি বললুম, তার টাকা কি তোমার টাকা নয় ? সে খুব অভিমানের সঙ্গেই বললে, নয়। আমি বললুম, তা হলে সে টাকা তারও নয়। সে টাকা দেশের । দেশের যখন প্রয়োজন আছে তখন এ টাক নিখিল দেশের কাছ থেকে চুরি করে রেখেছে। বিমলা বললে, আমি সে টাকা পাব কী করে । যেমন করে হক। তুমি সে পারবে। যার টাকা তুমি তার কাছে এনে দেবে। বন্দেমাতরম্। বন্দেমাতরং এই মন্ত্রে আজ লোহার সিন্দুকের দরজা খুলবে, ভাণ্ডারঘরের প্রাচীর খুলবে, আর যারা ধর্মের নাম করে সেই মহাশক্তিকে মানে না তাদেব হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে যাবে। মক্ষী, বলো বন্দেমাতরম। বন্দেমাতরম । আমরা পুরুষ, আমরা রাজা, আমরা খাজনা নেব। আমরা পৃথিবীতে এসে অবধি পৃথিবীকে লুঠ করছি। আমরা যতই তার কাছে দাবি করেছি ততই সে আমাদের বশ মেনেছে। আমরা পুরুষ আদিকাল থেকে ফল পেড়েছি, গাছ কেটেছি, মাটি খুঁড়েছি, পশু মেরেছি, পাখি মেরেছি, মাছ মেরেছি। সমুদ্রের তলা থেকে, মাটির নিচে থেকে, মৃত্যুর মুখের থেকে আদায়, আদায়, আমরা কেবলই আদায় করে এসেছি—আমরা সেই পুরুষজাত । বিধাতার ভাণ্ডারের কোনো লোহার সিন্দুককে আমরা রেয়াত করি নি—আমরা ভেঙেছি আর কেড়েছি । এই পুরুষদের দাবি মেটানোই হচ্ছে ধরণীর আননা । দিনরাত সেই অস্তহীন দাবি মেটাতে মেটাতেই পৃথিবী উর্বরা হয়েছে, মুন্দরী হয়েছে, সার্থক হয়েছে, নইলে জঙ্গলের মধ্যে ঢাকা পড়ে সে আপনাকে আপনি জানত না । নইলে তার হৃদয়ের সকল দরজাই বন্ধ থাকত ; তার খনির হীরে খনিতেই থেকে যেত, আর গুক্তির মুক্তে আলোতে উদ্ধার পেত না । আমরা পুরুষ কেবল আমাদের দাবির জোরে মেয়েদের আজ উদঘাটিত করে দিয়েছি। কেবলই আমাদের কাছে আপনাকে দিতে দিতে তারা ক্ৰমে ক্রমে আপনাকে বড়ো করে বেশি করে পেয়েছে। তারা তাদের সমস্ত মুখের হীরে এবং