পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে ૨૭ જે ছেলে হয়েও যে এতবড়ো অদ্ভুত কেউ হতে পারে এ-কথা সে মনে করতেও পারে নি। দেখলে যে আমি রয়েই গেলুম। তার পরে তার লজ্জা হতে লাগল। আমি তাকে বললুম, মা, আমাকে তো তুমি অপমান করে তাড়াতে পারবে না। আর, আমি যদি থাকি তাহলে পঞ্চুকেও রাখব ; ওর মা-হারা সব ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ে, তারা পথে বেরোৰে এ তো আমি দেখতে পারব না। দুদিন আমার কথা চুপ করে শুনলে, ইাও বলে না, নাও বলে না, শেষ কালে আজ দেখি পোটলাপুটলি বাধছে । বললে, আমরা বৃন্দাবনে যাব, আমাদের পথখরচ দাও বৃন্দাবনে যাবে না জানি কিন্তু একটু মোটারকম পথখরচ দিতে হবে । তাই তোমার কাছে এলুম। আচ্ছা সে যা দরকার তা দেব। " বুড়িটা লোক খারাপ নয়। পঞ্চু ওকে জলের কলসী ছুতে দেয় না, ঘরে এলে ই ই করে ওঠে তাই নিয়ে ওর সঙ্গে খুটিনাটি চলছিল। কিন্তু ওর হাতে আমার খেতে আপত্তি নেই শুনে আমাকে যন্ত্রের একশেষ করেছে । চমৎকার রাধে । আমার উপরে পঞ্চুর ভক্তিশ্রদ্ধা ষে একটুখানি ছিল তাও এবার চুকে গেল। আগে ওর ধারণা ছিল অন্তত আমি লোকট। সরল, কিন্তু এবার ওর ধারণা হয়েছে আমি ষে বুড়িটার হাতে খেলুম সেট কেবল তাকে বশ করবার ফন্দি । সংসারে ফন্দিটা চাই বটে কিন্তু তাই বলে একেবারে ধর্মটা খোয়ানো ? মিথ্যে সাক্ষিতে আমি বুড়ির উপর যদি টেঙ্কা দিতে পারতুম তাহলে বটে বোঝা যেত। যা হ'ক বুড়ি বিদায় হলেও কিছুদিন আমাকে পঞ্চর ঘর আগলে থাকতে হবে—নইলে হরিশ কুণ্ডু কিছু একট। ংঘাতিক কাও করে বসবে। সে নাকি ওর পারিষদদের কাছে বলেছে, আমি ওর একটা জাল মামী জুটিয়ে দিলুম, ও বেটা আমার উপর টেক্কা মেরে কোথা থেকে এক জাল বাবার জোগাড় করেছে ; দেখি ওর বাবা ওকে বাচায় কী করে । আমি বললুম, ও বাচতেও পারে মরতেও পারে কিন্তু এই যে এরা দেশের লোকের জন্তে হাজার রকম ছাচের ফাস-কল তৈরি করছে, ধর্মে সমাজে ব্যবসায়ে, সেটার সঙ্গে লড়াই করতে করতে যদি হারও হয় তাহলেও আমরা সুখে মরতে পারব।