পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२१8 রবীন্দ্র-রচনাবলী অমূল্যকে বললুম, যাও তোমাকে কিছু করতে হবে না-টাকা সংগ্রহ করবার ভার আমারই উপর। যখন সে দরজা পর্যন্ত গেছে তাকে ডাক দিয়ে ফেরালুম, বললুম, অমূল্য, আমি তোমার দিদি । আজ ভাইফোটার পাঞ্জির তিথি নয়, কিন্তু ভাইফোটার আসল তিথি বছরে তিন-শ পয়ষট্টি দিন । আমি তোমাকে আশীর্বাদ করছি ভগবান তোমাকে রক্ষা করুন | হঠাৎ আমার মুখ থেকে এই কথা শুনে অমূল্য একটু থমকে রইল। তার পরেই প্ৰণাম করে আমার পায়ের ধুলো নিলে। উঠে যখন দাড়াল তার চোখ ছলছল করছে। ভাই আমার,আমি তো মরতেই বসেছি—তোমার সব বালাই নিয়ে যেন মরি—আম! হতে তোমার কোনো অপরাধ যেন না হয় । অমূল্যকে বললুম, তোমার পিস্তলটি আমাকে প্রণামী দিতে হবে। কী করবে দিদি । মরণ প্র্যাকটিস করব । এই তো চাই দিদি, মেয়েদেরও মরতে হবে, মারতে হবে । এই বলে অমূল্য পিস্তলটি আমার হাতে দিলে । অমূল্য তার তরুণ মুখের দীপ্তিরেখা আমার জীবনের মধ্যে নূতন উষার প্রথমঅরুণলেখাটির মতো একে দিয়ে গেল। পিস্তলটাকে বুকের কাপড়ের ভিতর নিয়ে বললুম, এই রইল আমার উদ্ধারের শেষ সম্বল, আমার ভাইফোটার প্রণামী । নারীর হৃদয়ে যেখানে মায়ের আসন আমার সেইখানকার জানলাটি হঠাৎ এই একবার খুলে গিয়েছিল। তখন মনে হল এখন থেকে বুঝি তবে খোলাই রইল । কিন্তু শ্রেয়ের পথ আবার বন্ধ হয়ে গেল, প্রেয়সী নারী এসে মাতার স্বস্ত্যয়নের ঘরে তালা লাগিয়ে দিলে । পরের দিনে সন্দীপের সঙ্গে আবার দেখা । একটা উলঙ্গ পাগলামি আবার হৃৎপিণ্ডের উপর দাড়িয়ে নৃত্য শুরু করে দিলে। কিন্তু এ কী এ । এই কি আমার স্বভাব। কখনোই না । এই নির্লজ্জকে এই নিদারুণকে এর আগে কোনোদিন দেখি নি। সাপুড়ে হঠাৎ এসে এই সাপকে আমার আঁচলের ভিতর থেকে বের করে দেখিয়ে দিলে—কিন্তু কখনোই এ আমার আঁচলের মধ্যে ছিল না, এ ওই সাপুড়েরই চাদরের ভিতরকার জিনিস। অপদেবতা কেমন করে আমার উপর ভর করেছে—আজ আমি যা কিছু করছি সে আমার নয়, সে তারই লীলা ।