পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে : ዓæ ভক্তকে বরাভয় দেবার শক্তি তার নেই ? আমি ষে-স্তবগান শুনেছিলুম, যে-গান শুনে স্বৰ্গ হতে ধুলোয় নেমে এসেছিলুম, সে কি এই ধুলোকে স্বর্গ করবার জন্তে নয়, সে কি স্বৰ্গকেই মাটি করবার জন্যে ? সন্দীপ আমার মুখের দিকে তার তীব্র দৃষ্টি রেখে বললে, টাকা চাই, রানী । অমূল্য আমার মুখের দিকে চেয়ে রইল,—সেই বালক,—সে আমার মায়ের গর্তে জন্মায় নি বটে, কিন্তু সে তো তার মায়ের গর্ভে জন্মেছিল—সেই মা, সে যে একই মা ! আহা ওই কচি মুখ, ওই স্নিগ্ধ চোখ, ওই তরুণ বয়েস ! আমি মেয়েমানুষ, আমি ওর মায়ের জাত,—ও আমাকে বললে কিনা, আমার হাতে বিষ তুলে দাও—আর আমি ওর হাতে বিষই তুলে দেব ! o টীক চাই রানী !—রাগে লজ্জায় আমার ইচ্ছে হল সেই সোনার বোঝা সন্দীপের মাথার উপর ছুড়ে ফেলে দিই। আমি কিছুতেই আঁচলের গিরে যেন খুলতে পারছিলুম না, থরথর করে আমার আঙ লগুলে। কঁপিতে লাগল। তার পর টেবিলের উপর সেই কাগজের মোড়কগুলে। যখন পড়ল তখন সন্দীপের মুখ কালো হয়ে উঠল । সে নিশ্চয় ভাবলে ওষ্ট মোড়ক গুলোর মধ্যে আধুলি আছে। কী ঘৃণা ! অক্ষমতার উপরে কী নিষ্ঠুর অবজ্ঞ! ! মনে হল ও যেন আমাকে মারতে পারে । সন্দীপ ভাবলে, আমি বুঝি ওর সঙ্গে দর করতে বসেছি—ওর পাচ হাজার টাকার দাবি দু-তিন শ টfক দিয়ে রফা করতে চাই । একবার মনে হল, এই মোড়কগুলো নিয়ে ও জানলার বাইরে ছুড়ে ফেলে দেবে। ও কি ভিক্ষুক ? ও যে রাজা । অমূল্য জিজ্ঞাসা করলে, আর নেই, রানীদিদি ? করুণায় ভরা তার গলা । আমার মনে হল আমি বুঝি চীংকার করে কেঁদে উঠব। প্রাণপণে হৃদয়কে যেন চেপে ধরে একটু কেবল ঘাড় নাড়লুম। সন্দীপ চুপ করে রইল—মোড়কগুলো ছুলেও না, একটা কথাও বললে না । চলে যাব ভাবছি কিন্তু কিছুতেই আমার প। চলছে না—পৃথিবী দু-ফাক হয়ে আমাকে যদি টেনে নিত তাহলেই এই মাটির পিও মাটির মধ্যে আশ্রয় পেয়ে বচিত । আমার অপমান ওই বালকের বুকে গিয়ে বাজল । সে হঠাৎ খুব একটা আনন্দের ভান করে বলে উঠল, এই কম কী ! এতেই ঢের হবে। তুমি আমাদের দ্বাচিয়েছ। ब्रांनेौग्निलेि । . . . . বলেই সে একটা মোড়ক খুলে ফেললে—গিনিগুলো ঝকঝক করে উঠল। . . এক মুহূর্তে সঙ্গীপের মুখের যেন একটা কালো মোড়ক খুলে গেল। তারও মুখ