পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२४० রবীন্দ্র-রচনাবলী চোখ আনন্দে ঝকঝক করতে লাগল। মনের ভিতরকার এই হঠাৎ উলটো হাওয়ার দমকা সামলাতে না পেরে সে চৌকি থেকে লাফিয়ে উঠে আমার কাছে ছুটে এল । কী তার মতলব ছিল জানি নে। আমি বিদ্যুতের মতো অমূল্যের মুখের দিকে একবার চেয়ে দেখলুম—হঠাৎ একটা চাবুক খেয়ে তার মুখ যেন বিবর্ণ হয়ে গেছে । আমি আমার সমস্ত শক্তি নিয়ে সন্দীপকে ঠেলা দিলুম। পাথরের টেবিলের উপর মাথাটা তার ঠক করে ঠেকল, তার পরে সেখান থেকে সে মাটিতে পড়ে গেল— কিছুক্ষণ তার আর সাড়া রইল না। এই প্রবল চেষ্টার পরে আমার শরীরে আর একটুও বল ছিল না—আমি চৌকির উপরে বসে পড়লুম। অমূল্যের মুখ আনন্দে দীপ্ত হয়ে উঠল—সে সন্দীপের দিকে ফিরেও তীকালে না—আমার পায়ের ধুলো নিয়ে আমার পায়ের কাছে বসল। ওরে ভাই, ওরে বাছ, তোর এই শ্রদ্ধাটুকু আজ আমার শূন্ত বিশ্বপাত্রের শেষ সুধাবিন্দু। আর আমি পারলুম না—আমার কান্না ভেঙে পড়ল। আমি দুই হাতে আঁচল দিয়ে মুখ চেপে ধরে ফুপিয়ে কাদতে লাগলুম। মাঝে মাঝে আমার পায়ের উপর অমূল্যের করুণ হাতের স্পর্শ যতই পাই আমার কান্না ততই ফেটে পড়তে চায় । খানিকক্ষণ পরে সামলে উঠে চোখ খুলে দেখি যেন একেবারে কিছুই হয় নি এমনিভাবে সন্দীপ টেবিলের কাছে বসে গিনি গুলো রুমালে বাধছে। অমূল্য আমার পায়ের কাছ থেকে উঠে দাড়াল—ছলছল করছে তার চোখ । সন্দীপ অসংকোচে আমাদের মুখের দিকে চোখ তুলে বললে, ছ-হাজার টাকা । অমূল্য বললে, এত টাকা তো আমাদের দরকার নেই সন্দীপবাবু । হিসেব করে দেখেছি সাড়ে তিন হাজার টাকা হলেই আমাদের এখনকার কাজ উদ্ধার হবে । সন্দীপ বললে, আমাদের কাজ তো কেবলমাত্র এখনকার কাজই নয় । আমাদের যা দরকার তার কি সংখ্যা আছে ? অমূল্য বললে, তা হ’ক, ভবিষ্যতে যা দরকার হবে তার জন্যে আমি দায়ী—আপনি ওই আড়াই হাজার টাকা রানীদিদিকে ফিরিয়ে দিন । সুন্দীপ আমার মুখের দিকে চাইলে । আমি বলে উঠলুম, ন না, ও-টাকা আমি আর ছুতেও চাই নে। ও নিয়ে তোমাদের যা-খুশি তাই করে। সন্দ্বীপ অমূল্যের দিকে চেয়ে বললে, মেয়েরা যেমন করে দিতে পারে এমন কি পুঞ্জৰ পরে ? সুমূল্য উচ্ছ্বসিত হয়ে বললে, মেয়েরা যে দেবী । . ביוון সন্দীপ বললে, আমরা পুরুষরা বড়ো জোর আমাদের শক্তিকে দিতে পারি, মেয়ের