পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●>8 রবীন্দ্র-রচনাবলী কলকাতাতেই যাই, কি এখানেই থাকি সব সমান। তার পর থেকে সংসারটা যে কেমন, জীবনটা যে কী, কে জানে। সব ধোয়া, স্বপ্ন । এই যে আমার অদৃষ্ট দৃষ্ট হয়ে উঠল বলে, আর কয়েক ঘণ্টা মাত্র আছে—এই সময়টাকে কেউ একদিন থেকে আর-এক দিন পর্যন্ত সরিয়ে সরিয়ে টেনে টেনে খুব দীর্ঘ করে দিতে পারে না ? তাহলে এরই মধ্যে আমি ধীরে ধীরে একবার সমতটা যথাসাধ্য সেরে-সুরে নিই—অন্তত এই আঘাতটার জন্ত নিজেকে এবং সংসারকে প্রস্তুত করে তুলি। প্রলয়ের বীজ যতক্ষণ মাটির নিচে থাকে ততক্ষণ অনেক সময় নেয়—সে এত সময় যে, মনে হয় ভয়ের বুঝি কোনো কারণ নেই—কিন্তু মাটির উপর একবার যেই এতটুকু অঙ্কুর দেখা দেয় অমনি দেখতে দেখতে বেড়ে ওঠে, তখন তাকে কোনোমতে আঁচল দিয়ে বুক দিয়ে প্রাণ দিয়ে চাপা দেবার আর সময় পাওয়া १ोंध्र नीं । মনে করছি কিছুই ভাবব না, অসাড় হয়ে চুপ করে পড়ে থাকব, তার পরে মাথার উপরে যা এসে পড়ে পড়ুক গে। পরশুদিনের মধ্যেই তো যা হবার তা হয়ে যাবে— জানাশোনা, হাসাহাসি, কাদাকাটি, প্রশ্ন, প্রশ্নের জবাব, সবই । কিন্তু অমূল্যর সেই আত্মোংসর্গের-দীপ্তিতে-মুন্দর বালকের মুখখানি যে কিছুতে ভুলতে পারছি নে । সে তো চুপ করে বসে ভাগ্যের প্রতীক্ষা করে নি—সে যে ছুটে গেল বিপদের মাঝখানে। আমি নারীর অধম তাকে প্রণাম করি,—সে আমার বালক দেবতা,-- সে আমার কলঙ্কের বোঝা একেবারে খেলাচ্ছলে কেড়ে নিতে এসেছে ;—সে আমার মার নিজের মাথায় নিয়ে আমাকে বাচাবে, ভগবানের এমন ভয়ানক দয়া আমি সইব কেমন করে ? বাছ। অামার, তোমাকে প্রণাম, ভাই অামার, তোমাকে প্রণাম–নির্মল তুমি, সুন্দর তুমি, বীর ভূমি, নিৰ্ভীক তুমি, তোমাকে প্রণাম—জন্মাস্তরে তুমি আমার ছেলে হয়ে আমার কোলে এস এই বর আমি কামনা করি । এর মধ্যে চারদিকে নানা গুজব জেগে উঠছে, পুলিস আনাগোনা করছে, বাড়ির দাসীচাকররা সবাই উদ্বিগ্ন । ক্ষেমা দাসী আমাকে এসে বললে, ছোটোরানীমা, আমার এই সোনার পৈচে আর বাজুবন্ধ তোমার লোহার সিন্দুকে তুলে রেখে দাও । —ঘরের ছোটোরানীই দেশ জুড়ে এই দুর্ভাবনার জাল তৈরি করে নিজে তার মধ্যে আটকা পড়ে গেছে এ-কথা বলি কার কাছে ? ক্ষেমার গয়না থাকোর জমানো টাকা আমাকে ভালোমানুষের মতো নিতে হল। আমাদের গয়লানী একটা টিনের বাক্সয় করে একটি বেনারসি কাপড় এবং তার আর-জার দামি সম্পত্তি আমার