পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७२8 রবীন্দ্র-রচনাবলী দারোগ বললেন, শুধু ভদ্রলোকের ছেলে নয়, উনি নিবারণ ঘোষালের ছেলে— তিনি আমার ক্লাস-ফ্রেও ছিলেন। মহারাজ, আমি আপনাকে বলে দিচ্ছি— ব্যাপারখানা কী । অমূল্য জানতে পেরেছেন কে চুরি করেছে—এই বন্দেমাতরমের হজুক উপলক্ষ্যে তাকে উনি চেনেন। নিজের ঘাড়ে দায় নিয়ে তাকে উনি বাচাতে চান। এই সব হচ্ছে ওঁর বীরত্ব। বাবা, আমাদেরও বয়েস একদিন তোমাদেরই মতো ওই আঠারো-উনিশ ছিল—পড়তুম রিপন কলেজে-একদিন স্ট্র্যাওে এক গোরুর গাড়ির গাড়োয়ানকে পাহারাওয়ালার জুলুম থেকে বাচাবার জন্তে প্রায় জেলখানার সদর-দরজার দিকে ঝুকেছিলুম—দৈবাৎ ফসকে গেছে —মহারাজ এখন চোর ধরা-পড়া শক্ত হল কিন্তু আমি বলে রাখছি কে এর মূলে আছে। আমি জিজ্ঞাসা করলুম, কে । আপনার নায়েব তিনকড়ি দত্ত আর ওই কাসেম সর্দার । দারোগা তার এই অনুমানের পক্ষে নানা যুক্তি দেখিয়ে যখন চলে গেল আমি অমূল্যকে বললুম, টাকাটা কে নিয়েছিল আমাকে যদি বল কারও কোনো ক্ষতি হবে না । حے سے সে বললে, আমি । কেমন করে ? ওরা যে বলে ডাকাতের দল— আমি একলা । অমূল্য যা বললে সে অদ্ভুত। নায়েব রাত্রে আহার সেরে বাইরে বসে আচাচ্ছিল, সে-জায়গাটা ছিল অন্ধকার। অমূল্যর দুই পকেটে দুই পিস্তল, একটাতে ফাকা টোটা আর একটাতে গুলি ভরা। ওর মুখের আধখানাতে ছিল কালো মুখোশ। হঠাৎ একটা বুলস্-আই লন্ঠনের আলো নায়েবের মুখে ফেলে পিস্তলের ফাকা আওয়াজ করতেই সে হাউমাউ শব্দ করে মূছ গেল—দু-চারজন বরকন্দাজ ছুটে আসতেই তাদের মাথার উপর পিস্তলের আওয়াজ করে দিলে, তারা যে যেখানে পারলে ঘরের মধ্যে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলে। কাসেম সর্দার লাঠি হাতে ছুটে এল, তার পা লক্ষ্য করে গুলি মারতেই সে বসে পড়ল। তার পরে ওই নায়েবকে দিয়ে লোহার সিন্দুক খুলিয়ে ছ-হাজার টাকার নোটগুলো নিয়ে আমাদের কাছারির এক ঘোড়া মাইল পাচ-ছয় ছুটিয়ে সেই ঘোড়াটাকে এক জায়গায় ছেড়ে দিয়ে পরদিন সকালে আমার এখানে এসে পৌছেছে।