সাহিত্য . O3) পুরুষমানুষের জাপিসের কাপড় সাদাসিধা—তাহা যতই বাহুল্যবর্জিত হয়, ততই কাজের উপযোগী হয়। মেয়েদের বেশভূষা, লজ্জাশরম, ভাবভঙ্গি, সমস্ত-স্মৃত্যুসমাজেই প্রচলিত । মেয়েদের কাজ হৃদয়ের কাজ । তাহাদিগকে হৃদয় দিতে হয় ও হৃদয় আকর্ষণ করিতে হয়—এই জন্ত তাহাদিগকে নিতান্ত সোজাসুজি সাদাসিধা ছাটাছোট হইলে চলে না । পুরুষদের যথাযথ হওয়া আবশ্বক—কিন্তু মেয়েদের মুন্দর হওয়া চাই । পুরুষের ব্যবহার মোটের উপর মুস্পষ্ট হইলেই ভালো—কিন্তু মেয়েদের ব্যবহারে অনেক আবরণ, আভাস-ইঙ্গিত থাকা চাই । সাহিত্যও আপন চেষ্টাকে সফল করিবার জন্ত অলংকারের রূপকের ছন্দের আভাসের-ইঙ্গিতের আশ্রয় গ্রহণ করে । দর্শন-বিজ্ঞানের মতো নিরলংকার হইলে তাহরি চলে না । 顯 অপরূপকে রূপের দ্বারা ব্যক্ত করিতে গেলে বচনের মধ্যে অনির্বচনীয়তাকে রক্ষা করিতে হয় । নারীর যেমন ঐ এবং হ্রী, সাহিত্যের অনির্বচনীয়তাটিও সেইরূপ । তাহা অনুকরণের অতীত। তাহা অলংকারকে অতিক্রম করিয়া উঠে, তাহা অলংকারের দ্বারা আচ্ছন্ন হয় না । ভাষার মধ্যে এই ভাষাতীতকে প্রতিষ্ঠিত করিবার জন্ত সাহিত্য প্রধানত ভাষার মধ্যে দুইটি জিনিস মিশাইয়া থাকে—চিত্র এবং সংগীত । কথার দ্বারা যাহা বলা চলে না, ছবির দ্বারা তাহা বলিতে হয়। সাহিত্যে এই ছবি আঁকার সীমা নাই। উপমা-তুলনা-রূপকের দ্বারা ভাবগুলি প্রত্যক্ষ হইয়া উঠিতে চায়। “দেখিবারে আঁখি-পাখি ধায়” এই এক কথায় বলরামদাস কী না বলিয়াছেন ? ব্যাকুল দৃষ্টির ব্যাকুলত কেবলমাত্র বর্ণনায় কেমন করিয়া ব্যক্ত হইবে ? দৃষ্টি পাখির মতো উড়িয়া ছুটিয়াছে, এই ছবিটুকুতে প্রকাশ করিবার বহুতর ব্যাকুলত মুহূর্তে শান্তিলাভ করিয়াছে । এ-ছাড়া ছন্দে শব্দে বাক্যবিস্তাসে সাহিত্যকে সংগীতের আশ্রয় তো গ্রহণ করিতেই হয়। যাহা কোনোমতে বলিবার জো নাই, এই সংগীত দিয়াই তাহা বলা চলে। অর্থবিশ্লেষ করিয়া দেখিলে ষে-কথাটা যৎসামান্ত, এই সংগীতের দ্বারাই তাহা অসামান্ত হইয় উঠে । কথার মধ্যে বেদন এই সংগীতই সঞ্চার করিয়া দেয়। অতএব চিত্র এবং সংগীতই সাহিত্যের প্রধান উপকরণ। চিত্র ভাবকে আকার দেয় এবং সংগীত ভাবকে গতিদান করে । চিত্র দেহ এবং সংগীত প্ৰাণ । իբ է কিন্তু কেবল মানুষের হৃদয়ই ষে সাহিত্যে ধরিয়া রাখিবার জিনিস তাহা নহে।
পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
