পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VIII রবীন্দ্র-রচনাবলী ফুলপাত, প্রদীপের মালা এবং সোনারুপার থালি দিয়া যদি ভোজের জায়গা সাজাইতে পার, সে তো ভালই, কিন্তু নিমন্ত্ৰিত যদি যজ্ঞকর্তার কাছ হইতে সমাদর না পায়, হৃদ্যতা না পায়, তবে সে-সমস্ত ঐশ্বর্ধ ও সৌন্দর্য তাহার কাছে রোচে না, কারণ এই হৃদ্যতাই অস্তরের ঐশ্বৰ্ষ, অস্তরের প্রাচুর্য। হৃদ্যতার মিষ্টহাস্ত মিষ্টবাক্য মিষ্টব্যবহার এমন মুন্দর যে, তাহা কলার পাতাকেও সোনার থালার চেয়ে বেশি মূল্য দেয়। সকলের কাছেই যে দেয়, এ-কথাও বলিতে পারি না । বহু আড়ম্বরের ভোজে অপমানস্বীকার করিয়াও প্রবেশ করিতে প্রস্তুত, এমন লোকও অনেক দেখা যায় । কেন দেখা যায় ? কারণ, ভোজের বড়ো তাৎপর্য বৃহৎ সৌন্দর্য সে বোঝে না । বস্তুত খাওয়াটা বা সজ্জাটাই ভোজের প্রধান অঙ্গ নহে। কুঁড়ির পাপড়িগুলি যেমন নিজের মধ্যেই কুঞ্চিত, তেমনি স্বাৰ্থরত মানুষের শক্তি নিজের দিকেই চিরদিন সংকুচিত, একদিন তাহার বাধন চিলা করিয়া তাহাকে পরাভিমুখ করিবামাত্র ফোটা ফুলের মতো বিশ্বের দিকে তাহার মিলনমাধুর্যময় অতি স্বন্দর বিস্তার ঘটে—যজ্ঞের সেই ভিতর-দিকটার গভীরতর মঙ্গলসৌন্দর্য ষে-ব্যক্তি সম্পূর্ণ দেখিতে পায় না, তাহার কাছে ভোজ্যপেয়ের প্রাচুর্য ও সাজসজ্জার আড়ম্বরই বড়ো হইয়া উঠে। তাহার অসংযত প্রবৃত্তি, তাহার দানদক্ষিণা-পানভোজনের অতিমাত্র লোভ যজ্ঞের উদার মাধুর্যকে ভালো করিয়া দেখিতে দেয় না। শাস্ত্র বলে, “শক্তস্ত ভূষণং ক্ষম। ক্ষমাই শক্তিমানের ভূষণ। কিন্তু ক্ষমাপ্রকাশের মধ্যেই শক্তির সৌন্দর্য অনুভব তো সকলের কর্ম নহে। বরঞ্চ সাধারণ মূঢ়লোকেরা শক্তির উপদ্রব দেখিলেই তাহার প্রতি শ্রদ্ধা বোধ করে। লজ্জা স্ত্রীলোকের ভূষণ । কিন্তু সাজসজ্জার চেয়ে এই লজ্জার সৌন্দর্য কে দেখিতে পায় ?—যে ব্যক্তি সৌন্দর্যকে সংকীর্ণ করিয়া দেখে না। সংকীর্ণ প্রকাশের তরঙ্গভঙ্গ যখন বিস্তীর্ণ প্রকাশের মধ্যে শান্ত হইয়া গেছে, তখন সেই বড়ো সৌন্দর্যকে দেখিতে হইলে উচ্চভূমি হইতে প্রশস্তভাবে দেখা চাই। তেমন করিয়া দেখার জন্য মানুষের শিক্ষা চাই, গাষ্ঠীর্ঘ চাই, অস্তরের শাস্তি চাই । আমাদের দেশের প্রাচীন কবিরা গর্ভিণীনারীর সৌন্দর্যবর্ণনায় কোথাও কুষ্ঠাপ্রকাশ করেন নাই । যুরোপের কবি এখানে একটা লজ্জা ও জীনতা বোধ করেন । বতত গভিণী রমণীর যে কাস্তি, সেটাতে চোখের উৎসব ডেমন নাই। নারীত্বের চরম সার্থকতালাভ যখন আসন্ন হইয়া আসে, তখন তাহারই প্রতীক্ষা নারীমূর্তিকে গৌরবে ভরিয়া তোলে। এই দৃশ্বে চোখের বিলাসে যেটুকু কম পড়ে মনের ভক্তিতে তাহার চেয়ে অনেক বেশি পূরণ করিয়া দেয়। সমস্ত বৃষ্টি ঝরিয়-পড়িয়া শরতের ৰে