পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য 093 এইরূপে বুঝিলে সত্যের অনুভূতি ও সৌন্দর্যের অনুভূতি এক হইয়া দাড়ায়। মানবের সমস্ত সাহিত্য সংগীত ললিতকলা জানিয়া এবং না জানিয়া এইদিকেই চলিতেছে। মাহুষ তাহার কাব্যে চিত্রে শিল্পে সত্যমাত্রকেই উজ্জল করিয়া তুলিতেছে। পূর্বে যাহা চোখে পড়িত না বলিয়া আমাদের কাছে অসত্য ছিল, কবি তাহাকে আমাদের দৃষ্টির সামনে আলিয়া আমাদের সত্যের রাজ্যের আনন্দের রাজ্যের সীমানা বাড়াইয়া দিতেছেন। সমস্ত তুচ্ছকে অনাদৃতকে মানুষের সাহিত্য প্রতিদিন সত্যের গৌরবে আবিষ্কার করিয়া কলাসৌন্দর্ষে চিহ্নিত করিতেছে। যে কেবলমাত্র পরিচিত ছিল, তাহাকে বন্ধু করিয়া তুলিতেছে। যাহা কেবলমাত্র চোখে পড়িত, তাহার উপরে মনকে টানিতেছে । wisfäw of footosa, “Truth is beauty, beauty truth”—atstown শুভ্ৰবসনা কমলালয়া দেবী সরস্বতী একাধারে Truth এবং Beauty মূতিমতী । উপনিষদও বলিতেছেন, “আনন্দরূপমমৃতং যদবিভাতি, যাহা-কিছু প্রকাশ পাইতেছে, তাহাই তাহার আনন্দরূপ, তাহার অমৃতরূপ আমাদের পদতলের ধূলি হইতে আকাশের নক্ষত্র পর্যন্ত সমস্তই truth এবং beauty, সমস্তই আনন্দরূপমমৃতম্। সত্যের এই আনন্দরূপ অমৃতরূপ দেখিয়া সেই আনন্দকে ব্যক্ত করাই কাব্যসাহিত্যের লক্ষ্য। সত্যকে যখন শুধু আমরা চোখে দেখি, বুদ্ধিতে পাই, তখন নয়, কিন্তু যখন তাহাকে হৃদয় দিয়া পাই, তখনই তাহাকে সাহিত্যে প্রকাশ করিতে পারি। তবে কি সাহিত্য কলাকৌশলের স্বষ্টি নহে, তাহা কেবল হৃদয়ের আবিষ্কার ? ইহার মধ্যে স্বষ্টিরও একটা ভাগ আছে । সেই আবিষ্কারের বিস্ময়কে, সেই আবিষ্কারের আনন্দকে হৃদয় আপনার ঐশ্বৰ্যদ্বারা ভাষায় বা ধ্বনিতে বা বর্ণে চিহ্নিত করিয়া রাখে—ইহাতেই স্বষ্টিনৈপুণ্য—ইহাই সাহিত্য, ইহাই সংগীত, ইহাই চিত্রকলা । মরুভূমির বালুময় বিস্তারের মাঝখানে দাড়াইয়া মানুষ তাহাকে দুই পিরামিডের বিষ্ময়চিহ্নের দ্বারা চিহ্নিত করিয়াছে ; নির্জন দ্বীপের সমুদ্রতটকে মানুষ পাহাড়ের গায়ে কারুকৌশলপূর্ণ গুহা খুদিয়া চিহ্নিত করিয়াছে, বলিয়াছে, ইহা আমার হৃদয়কে তৃপ্ত করিল ; এই চিহ্নই বম্বাইয়ের হস্তিগুহা। পূর্বমুখে দাড়াইয়া মানুষ সমুদ্রের মধ্যে স্বৰ্বোদয়ের মহিমা দেখিল, অমনি বহুশতক্রোশ দূর হইতে পাথর আনিয়া সেখানে আপনার করজোড়ের চিহ্ন রাখিয় দিল, তাহাই কনারকের মন্দির। সত্যকে যেখানে মাহুৰ নিবিড়ন্ধপে অর্থাৎ আনন্দরূপে অমৃতরূপে উপলব্ধি করিয়াছে, সেইখানেই আপনার একটা চিহ্ন কাটিয়াছে। সেই চিহ্নই কোথাও বা মূর্তি, কোথাও বা মন্দির, কোথাও বা তীর্থ, কোথাও বা রাজধানী। সাহিত্যও এই চিহ্ন। বিশ্বজগতের