পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য ይፃ¢ সে-কথা ঠিক। তাদের নিতান্ত দরকারি কথা এত বেশি বেড়ে গেছে যে রসালাপের আর বড়ো সময় নেই। বিশেষত সাময়িক পত্রে সাময়িক জীবনের সমালোচনাই যুক্তিসংগত ; চিরস্থায়ী সাহিত্যকে ও-রকম একটা পত্রিকার প্রবাহের মধ্যে ভাসিয়ে দেওয়া ঠিক শোভা পায় কিনা বলা শক্ত । কিন্তু বড়ো লেখা যে বড়ো বেশি বাড়ছে সে-সম্বন্ধে আমার সন্দেহ নেই। আজকাল ইংরেজিতে বেশ একটু জাটর্সটি ছিপছিপে লেখা দেখলে আশ্চর্য বোধ হয় । ওরা বোধ হয় সময় পায় না। কাজের অতিরিক্ত প্রাচুর্বে ওদের সাহিত্য যেন অপরিচ্ছন্ন মোটাসোটা ঢিলেঢালা প্রৌঢ়া গিরির মতো আকার ধারণ করেছে । হৃদয়ের গাঢ়তা আছে কিন্তু মাঝে মাঝে সৌন্দর্ষের হ্রাস এবং বলের শৈথিল্য প্রকাশ পায়। যত বয়স বাড়ছে ওরা ততই যেন ওদের আদিম জর্মানিক প্রকৃতির দিকে ঝুঁকছে। আমার একটা অন্ধ সংস্কার আছে যে, সত্যকে যে-অবস্থায় যতদূর পাওয়া সম্ভব তাকে তার চেয়ে ঢের বেশি পাবার চেষ্টা করে, জর্মানেরা তার চারদিকে বিস্তর মিথ্যা স্তুপাকার করে তোলে। ইংরেজেরও হয়তো সে-রোগের কিঞ্চিৎ অংশ আছে। বলা বাহুল্য, এটা আমার একটা প্রাইভেট প্ৰগলভতা মাত্র, গম্ভীরভাবে প্রতিবাদযোগ্য নয় । \O একটিমাত্র গাছকে প্রকৃতি বলা যায় না । তেমনি কোনো একটিমাত্র বর্ণনাকে যদি সাহিত্য বলে ধর তাহলে আমার কথাটা বোঝানো শক্ত হয়ে দাড়ায় । বর্ণনা সাহিত্যের অস্তগত সন্দেহ নেই কিন্তু তার দ্বারা সাহিত্যকে সীমাবদ্ধ করা যায় না। একটিমাত্র সূর্যান্ত বর্ণনার মধ্যে লেখকের জীবনাংশ এত অল্প থাকতে পারে যে, হয়তো সেটুকু বোধগম্য হওয়া দুরূহ। কিন্তু উপরি-উপরি অনেকগুলি বর্ণনা দেখলে লেখকের মৰ্মগত ভাবটুকু আমরা ধরতে পারতুম। আমরা বুঝতে পারতুম লেখক বাহপ্রকৃতির মধ্যে একটা আত্মার সংস্রব দেখেন কিনা ; প্রকৃতিকে তিনি মানবসংসারের চারিপার্শ্ববর্তী দেওয়ালের ছবির মতো দেখেন, না, মানবসংসারকে এই প্রকাও রহস্যময়ী প্রকৃতির একান্তবর্তীস্বরূপ দেখেন, কিংবা মানবের সহিত প্রকৃতি মিলিত হয়ে, প্রাত্যহিক সহস্র নিকটসম্পর্কে বদ্ধ হয়ে, তার সম্মুখে একটি বিশ্বব্যাপী গার্হস্থ্য দৃপ্ত উপস্থিত করে। সেই তত্ত্বটুকুকে জানানোই যে সাহিত্যের উদ্বেগু তা নয়, কিন্তু সে অলক্ষিত ভাবে আমাদের মনের উপর কার্ব করে—কখনো বেশি মুখ দেয়, কখনো অল্প স্বধ দেয় ;