পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থ-পরিচয় HOA বহুমূল্য বোঝা আমরা মাথায় চাপাইয়াছি, বুঝিতে পারিতেছি, তাহার মূল্য যতই হ’ক, তাহা আমাদের বল অপহরণ করিতেছে—এখন মন কেবলই বলিতেছে, চাহি না, চাহি না, এ-সমস্ত কিছুই চাহি না । তবে কী চাই ? হৃদয়ের মধ্য হইতে এই প্রার্থনা উর্ধ্বস্বরে কাদিয়া উঠিতেছে, আপনাকে চাই ! চাই আপনার শক্তিকে। প্রচুর হইলেও উপকরণমাত্রে কোনো লাভ নাই— তাহা আবর্জনা । সভা-সমিতি, দরখাস্ত ও কনগ্রেসে যে আমাদিগের হীনতা হইতে মুক্তি দিতে পারে, এ মোহ আমাদের মন হইতে চলিয়া যাইতেছে, গবর্মেন্ট অনুগ্রহপূর্বক উচ্চ আসনে চড়াইয়া আমাদিগকে বড়ো করিতে পারে, এই মিথ্যা আশাও শিথিল হইয়া আসিয়াছে । এখনই যথার্থ সময় । এখনই মনে হইতেছে, কোনো মহাপুরুষের আবির্ভাব আসন্ন হইয়াছে, যিনি ভারতবর্ষের সম্মুখে ভারতবর্ষের পথ উদঘাটিত করিয়া দিবেন—যিনি আমাদের অস্তরের মধ্যে এই কথা ধ্বনিত করিয়া তুলিবেন যে, আমরা ভারতবাসী, আমরা ফিরিঙ্গি নই, আমরা বর্বর নই, আমাদের লজ্জার কোনো কারণ নাই । যিনি আমাদের মনকে আমাদের হৃদয়কে আমাদের কল্পনাকে স্বাধীন করিয়া দিবেন, যিনি আমাদের শিক্ষার বন্ধনমোচন করিবেন, আমাদের বিদেশী সংস্কারের সমস্ত কুহেলিকা অপসারিত করিয়া দিবেন । তখন আমাদের বর্তমান অবস্থা যেমনই থাক, আমাদের চিত্ত তাহার বহু উর্ধের্ব উঠিয়া সমস্ত বিশ্বজগৎকে প্রত্যক্ষ আপনার সম্মুখে প্রসারিত দেখিবে। এমন মুক্তি আছে, যাহাকে রাজার শাসন, প্রবলের পীড়ন, অবস্থার পেষণ স্পর্শ করিতে পারে না। সেই মুক্তিই ভারতবর্ষের লক্ষ্যস্থল ছিল এবং সকল ক্ষুদ্রতা ও স্বার্থচেষ্টার আক্রমণ হইতে সেই রত্নকে রক্ষা করিবার ভার লইয়াই ব্রাহ্মণ ভারতবর্ষে গৌরব লাভ করিয়াছিলেন এবং সেই রত্ব হারাইয়াই ব্রাহ্মণ ও ভারতবর্ষ রসাতলে গেছে । সেই মুক্তির আশা ও আনন্দ যখন অরুণালোকের স্তায় আমাদের মাতৃভূমির উদয়াচল স্পর্শ করিবে, তখন যে অপরূপ সংগীত চতুর্দিক হইতে ধ্বনিত উদ্‌গীত হইয়া উঠিবে, তাহা আমার অস্তরে বাজিতেছে, কিন্তু তাহা প্রকাশ করিবার সাধ্য আমার নাই। সেইদিনকার বঙ্গসাহিত্যের জন্ত আমরা অপেক্ষা করিয়া আছি, ততদিন যাহা করিতেছি, তাহা ক্রীড়াচ্ছলে সময়যাপন মাত্র।

  • সাহিত্যসন্মিলন” প্রবন্ধ "ভারতীয় শিল্পপ্রদর্শনীক্ষেত্রে সাহিত্য-সম্মিলন উপলক্ষে পঠিত হয়। “সাহিত্য-পরিষৎ- প্রবন্ধ “বহরমপুরের প্রস্তাবিত প্রাদেশিক সাহিত্যসম্মিলনের জন্ত লিখিত হইয়াছিল।" বঙ্গীয়-সাহিত্য-সন্মিলন প্রসঙ্গে নিম্নলিখিত