পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8) R রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী আচ্ছা, আমার যেন সান্তনার গুটি দুই-তিন সদুপায় আছে, কিন্তু তুমি বিরহযামিনী কেমনে যাপিবে, বিচ্ছেদতাপে যখন তাপিবে এপােশ ওপাশ বিছানা মাপিবে, মকরকেতনে কেবলই শাপিবেপুরবালা । রক্ষে করো, ও মিলটা ঐখানেই শেষ করো ! অক্ষয় । দুঃখের সময় আমি থামতে পারি নে, কাব্য আপনি বেরোতে থাকে। মিল ভালো না বাস অমিত্ৰাক্ষর আছে, তুমি যখন বিদেশে থাকবে আমি ‘আর্তনাদ-বধ কাব্য’ বলে একটা কাব্য লিখব। সখী, তার আরম্ভটা শোনে (সাড়ম্বরে) বাষ্পীয় শকটে চড়ি নারীচুড়ামণি পুরবালা চলি যাবে গেলা কাশীধামে বিকালে, কহ হে দেবী অমৃতভাষিণী যাপিলা বিচ্ছেদমাস শ্যালীত্রয়ীশালী শ্ৰীঅক্ষয় ! পুরবালা । (সগর্বে) আমার মাথা খাও, ঠাট্ট নয়, তুমি একটা সত্যিকার কাব্য লেখে-না। অক্ষয় । মাথা খাওয়ার কথা যদি বললে, আমি নিজের মাথাটি খেয়ে অবধি বুঝেছি। ওটা সুখাদ্যের মধ্যে গণ্য নয়। আর ঐ কাব্য লেখা, ও কাৰ্যটাও সুসাধ্য বলে জ্ঞান করি নে। বুদ্ধিতে আমার এক জায়গায় ফুটাে আছে, কাব্য জমতে পারে না- ফস ফস করে বেরিয়ে পড়ে। তুমি জান আমার গাছে ফল কেন না। ফলেযেমনি ফুলটি ফুটে ওঠে আনি চরণতলে । কিন্তু, আমার প্রশ্নের তো কোনো উত্তর পেলুম না ? কৌতুহলে মরে যাচ্ছি। কাশীতে যে চলেছ, উৎসাহটা কিসের জন্যে। আপাতত সেই বিষ্ণুদূতটাকে মনে মনে ক্ষমা করলুম, কিন্তু ভগবান ভূতনাথ ভবানীপতির অনুচরগুলোর উপর ভারি সন্দেহ হচ্ছে। শুনেছি। নদী ও ভৃঙ্গী অনেক বিষয়ে আমাকেও জেতে, ফিরে এসে হয়তো এই ভূত্যটিকে পছন্দ না হতেও পারে। পুরবালা । আমি কাশী যাব না। অক্ষয় । সে কী কথা। ভূতভাবনের যে ভৃত্যগুলি একবার মরে ভূত হয়েছে তারা যে দ্বিতীয়বার মারবে । রসিকের প্রবেশ পুরবালা । আজ যে রসিকদার মুখ ভারি প্রফুল্ল দেখাচ্ছে। রসিক। ভাই, তাের রসিকদার মুখের ঐ রোগটা কিছুতেই ঘুচল না। কথা নেই বার্তা নেই প্রফুল্প হয়েই আছে, বিবাহিত লোকেরা দেখে মনে মনে রাগ করে । পুরবালা । শুনলে তো বিবাহিত লোক ? এর একটা উপযুক্ত জবাব দিয়ে যাও। অক্ষয় । আমাদের প্রফুল্লতার খবর ও বৃদ্ধ কোথা থেকে জানবে ? সে এত রহস্যময় যে তা উদ্ভেদ করতে আজ পর্যন্ত কেউ পারলে না, সে এত গভীর যে আমরাই হাতড়ে খুঁজে পাই নে- হঠাৎ সন্দেহ হয় उाछ केि भों । পুরবালা । এই বুঝি ! রাগ করিয়া চলিয়া যাইবার উপক্রম অক্ষয় । (তাহাকে ফিরাইয়া) দোহাই তোমার, এ লোকটির সামনে রাগারগি কোরো না- তা হলে ওর আস্পর্ধা আরো বেড়ে যাবে। দেখো দাম্পত্যতত্ত্বানভিজ্ঞ বৃদ্ধ, আমরা যখন রাগ করি তখন স্বভাবত