পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন We Sa মধ্যে প্রবুদ্ধ না হবার শোকই তার একমাত্র গভীরতম ও সত্যতম শোক । শিশুকে সংসারে যে আমরা এত বেশি অক্ষম বলে দেখি তার কারণই হচ্ছে সে একান্ত অক্ষম নয় । তার মধ্যে যে সত্য ক্ষমতা ভবিষ্যৎকে আশ্রয় করে আছে তারই সঙ্গে তুলনা করেই তার বর্তমান অক্ষমতাকে এমন বড়ো দেখতে হয় । এই অক্ষমতাই যদি নিত্য সত্য হত তা হলে এ সম্বন্ধে আমাদের কোনো চিন্তারই 9 श्ठ कां । সূর্যগ্রহণের ছায়া যেমন সূর্যের চেয়ে সত্য নয়, তেমনি স্বার্থবিদ্ধ মানবাত্মার দুর্বলতা মানবাত্মার চেয়ে বড়ো সত্য নয়। মানুষ অহংকে নিয়ে যতই নাড়াচাড়া করুক, তাই নিয়ে জগতে যত ভয়ানক আন্দোলন আলোড়ন যত উত্থান পতনই হােক-না কেন, তবু সেটাই চরম সত্য কদাচ নয়। মানুষের আত্মাই তার সত্য বস্তু বলেই তার অহমের চাঞ্চল্য এত বেশি প্ৰবল করে আমাদের আঘাত করে । এই তার অন্তরতম সত্যের মধ্যে সম্পূর্ণ সত্য হয়ে ওঠার সাধনাই হচ্ছে মনুষ্যত্বের চরম সাধনা। এই সত্যের মধ্যে সত্য হতে গেলে বদ্ধভাবে জড়ভাবে হওয়া যায় না ; বাধা কাটিয়ে তাকে লাভ না করলে লাভ করাই যায় না । সেইজন্য মানুষের আত্মা যে মুক্তিক্ষেত্রে জন্মগ্রহণ করেছে। সেই ক্ষেত্রের সত্য অধিকার সে নিশ্চেষ্টভাবে পেতেই পারে না । এইজন্যেই তার এত বাধা, এবং তার এই সকল বাধার দ্বারাই প্রমাণ হয় অসত্যপাশ হতে মুক্ত হওয়াই তার সত্য পরিণাম । শিশু যখন চলতে গিয়ে পড়ছে তখন যেমন তাকে বারংবার পতনীসত্ত্বেও চলার অভ্যাস করতে দেওয়া হয়, কারণ সকলেই জানে পড়াটাই তার চরম নয়, সেইরকম প্রত্যহ সত্যলোকে ব্ৰহ্মলোকে চলার অভ্যাস মানুষকে করতেই হবে । কোনো আলস্য কোনো ক্লেশে নিরস্ত হলে চলবে না। প্ৰত্যহ তার কাছে যাওয়া, তাকে চিন্তা করা, স্মরণ করা, এইটেই হচ্ছে পন্থা । সংসারে যতই বাধা থাকি-না। কেন, তবু সমস্ত খণ্ডতা সমস্ত আনিত্যের মধ্যে সেই অনন্ত সত্যকে স্বীকার করার দ্বারা মানুষ আপনার আত্মাকে সম্মান করে । বিষয়ের দাসত্ব যতই করি তবু সেইটেই পরম সত্য নয়, প্রতিদিন এই কথা মানুষকে কোনো-এক সময় স্বীকার করতেই হবে । সত্যং জ্ঞানমনন্তং ব্ৰহ্ম এই কথাই সত্য, এবং এই সত্যেই আমি সত্য ; ধনজনমানের দ্বারা আমি সত্য নই। আমি সত্যলোকে জ্ঞানলোকে রাসা করি, আমি ব্ৰহ্মলোকে প্রতিষ্ঠিত । আমার প্রতিদিনের ব্যবহারে আমি এ কথার সম্পূর্ণ সমর্থন এখনো করতে পারছি নে ; তবু মানুষকে এক দিকে আকাশে মাথা তুলে এবং এক দিকে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে বলতে হবে যে, সত্যং জ্ঞানমনন্তং ব্ৰহ্ম এই কথাই সত্য । এই সত্য, এই সত্য, এই সত্য- প্রতিদিন বলতে হবে ; বিমুখ মনকেও বলতে হবে ; ক্ষীণ কণ্ঠকেও উচ্চারণ করাতে হবে । নিয়ত বলতে বলতে আমরা যে সত্যলোকে বাস করছি এই বোধটি ক্রমশই আমাদের কাছে সহজ হয়ে আসবে। তখন অর্ধচেতন অবস্থায় দিন কাটবে না, তখন বার বার ধুলোর উপর পড়ে পড়ে যাব না, তখন আলোর দিকে আকাশের দিকে মাথা তুলে চলতে শিখব ; তখন বাইরের সমস্ত বস্তুকেই আমার আত্মার চেয়ে বড়ো করে জানিব না, এবং প্রবৃত্তির প্রবল উত্তেজনাকেই প্ৰকৃত আত্মপরিচয় বলে মনে করব না । ব্ৰহ্মাকে সহজ করে জানিবার শক্তিই আমাদের সত্যকার শক্তি ; সেই শক্তি আমাদের আছে ; জানতে পারছি নে বলে সে শক্তিকে কখনোই অস্বীকার করব না । বার বার তাকে ডাকতে হবে, বার বার তাকে বলতে হবে- এই তুমি, এই তুমি, এই তুমি । এই তুমি আমার সম্মুখেই, এই তুমি আমার অন্তরেই। এই তুমি আমার প্রতি মুহুর্তে, এই তুমি আমার অনন্ত কালে । বলতে বলতে র্তার নামে আমার সমস্ত শরীর বাজতে থাকবে, আমার মন বাজতে থাকবে, আমার বাহির বাজতে থাকবে, আমার সংসার বাজতে থাকবে । আমার চিত্ত বলবে সত্যং, আমার বিশ্বচরাচর বলবে সত্যং । ক্রমে আমার প্রতি দিনের প্রত্যেক কৰ্ম বলতে থাকবে সত্যং।। বেহালা যন্ত্র যতই পুরাতন হয় ততই তার মূল্য বেশি হয় তার কারণ, অনেক দিন থেকে সুর বাজতে বাজতে বেহালার কাষ্ঠফলকের পরমাণুগুলি সুরের ছন্দে ছন্দে সুবিন্যস্ত হয়ে ওঠে, তখন সুরকে আর সে বাধা দেয় না । সেইরকম আমরা প্রতিদিন তাকে যতই ডাকতে থাকি ততই আমাদের শরীর মনের সমস্ত অণু-পরমাণু তার সত্য নামে এমন সত্য হয়ে উঠতে থাকে যে বাজতে আর দেরি হয় না, কোথাও কিছুমাত্র उांद दक्षिों (ट्र कीं ।