পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SN9 রবীন্দ্র-রচনাবলী লোকেশ্বরী। তোমাদের তো বয়স হয়েছে। বাসবী। আমাদের ব্যবহারে তার কি কোনো বৈলক্ষণ্য দেখছেন ? লোকেশ্বরী। শিশু ! তোমরা নাকি বলে বেড়াচ্ছ, অহিংসা পরমে ধর্ম: ! বাসবী। আমাদের চেয়ে যাদের বয়স অনেক বেশি তারাই বলে বেড়াচ্ছেন, আমরা তো কেবল মুখে আবৃত্তি করি মাত্র । লোকেশ্বরী। নির্বোধকে কেমন করে বোঝাব অহিংসা ইতরের ধর্ম। হিংসা ক্ষত্রিয়ের বিশাল বাহুতে মাণিক্যের অঙ্গদ, নিষ্ঠুর তেজে দীপ্যমান। বাসবী। শক্তির কি কোমল রূপ নেই ? লোকেশ্বরী। আছে, যখন সে ডোবায়। যখন সে দৃঢ় করে বাধে তখন না। পর্বতকে স্বষ্টিকর্তা নির্দয় পাথর দিয়ে গড়েছেন, পাক দিয়ে নয়। তোমাদের গুরুর কৃপায় উপর থেকে নিচে পর্যন্ত সবই কি হবে পাক ? রাজবাড়িতে মানুষ হয়েও এই কথাটা মানতে ঘৃণা হয় না ? চুপ করে রইলে যে ? 轟 বাসবী। ভেবে দেখছি, মহারানী । লোকেশ্বরী। ভাববার কা আছে। চোখের সামনে দেখলে তো রাজপুত্র একমুহূর্তে রাজা হতে ভুলে গেল। বলে গেল চরাচরকে দয়া করবার সাধনা করব । শোননি, বাসবী ? বাসবী । শুনেছি। লোকেশ্বরী। তাহলে নির্দয়তা করবার গুরুতর কাজ গ্রহণ করবে কে ? কেউ যদি না করে তবে বীরভোগ্য বসুন্ধরার কী হবে গতি ? যত সব মাথা-হেঁট করা উপবাসজীর্ণ ক্ষীণকণ্ঠ মন্দাগ্নিস্নান নিজীবের হাতে তার দুর্গতির কি সীমা থাকবে ? তোরা ক্ষত্রিয়ের মেয়ে, কথাটা তোদের কাছে এত নতুন ঠেকছে কেন বাসব ? বাসবী। এই পুরানো কথাটা হঠাৎ আজ যেন একদিনে ঢাকা পড়ে গেছে বসন্তে নিম্পত্র কিংশুকের শাখা যেমন করে ফুলে ঢেকে যায়। লোকেশ্বরী। কখনো কখনো বুদ্ধিভ্রংশ হয়ে পুরুষ আপন পৌরুষধর্ম ভুলে যায় কিন্তু নারীরা যদি তাকে সেটা ভুলতে দেয় তাহলে মরণ যে সেই নারীর । মহালতার জন্যে কি মহাবৃক্ষের দরকার নেই ? সব গাছই গুল্ম হয়ে গেলে কি তার পক্ষে ভালো ? বল না । মুখে ষে উত্তর নেই। 顧 বাসবী। মহাবৃক্ষ চাই বই কি। লোকেশ্বরী। কিন্তু বনস্পতি নিমূল করবার জন্যই এসেছেন তোমাদের গুরু । তাও যে পরশুরামের মতো কুঠার হাতে করবেন এমন শক্তি নেই। কোমল শাস্ত্রবাক্যের