পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミbrbr * রবীন্দ্র-রচনাবলী জজসাহেব কহিলেন, “তাহার শাস্তি ফাসি।” চন্দরা কছিল, “ওগো তোমার পায়ে পড়ি, তাই দাওনা সাহেব। তোমাদের যাহা খুশি করে, আমার তো আর সহ হয় না ।” ষখন ছিদামকে আদালতে উপস্থিত করিল, চন্দরা মুখ ফিরাইল । জজ কহিলেন, *সাক্ষীর দিকে চাহিয়া বলে এ তোমার কে হয় ।” চন্দ্রর দুই হাতে মুখ ঢাকিয়া কহিল, “ও আমার স্বামী হয় ।” প্রশ্ন হইল –ও তোমাকে ভালোবাসে না ? উত্তর । উঃ ভারি ভালোবাসে । প্রশ্ন। তুমি উহাকে ভালোবাস না ? উত্তর । খুব ভালোবাসি । ছিদামকে যখন প্রশ্ন হইল, ছিদাম কহিল, “আমি খুন করিয়াছি।” প্রশ্ন | কেন । மும் ছিদাম । ভাত চাহিয়াছিলাম বড়োবউ ভাত দেয় নাই । দুখিরাম সাক্ষ্য দিতে আসিয়া, মূৰ্ছিত হইয়া পড়িল। মূৰ্ছাভঙ্গের পর উত্তর করিল, “সাহেব, খুন আমি করিয়াছি।” কেন । , ভাত চাহিয়াছিলাম ভাত দেয় নাই । বিস্তর জেরা করিয়া এবং অন্যান্য সাক্ষ্য শুনিয়া জজসাহেব স্পষ্ট বুঝিতে পারিলেন, ঘরের স্ত্রীলোককে ফঁাসির অপমান হইতে বাচাইবার জন্য ইহারা দুই ভাই অপরাধ স্বীকার করিতেছে। কিন্তু চন্দর পুলিস হইতে সেশন আদালত পর্যন্ত বরাবর এককথা বলিয়া আসিতেছে, তাহার কথার তিলমাত্র নড়চড় হয় নাই। দুইজন উকিল স্বেচ্ছাপ্রবৃত্ত হইয়া তাহাকে প্রাণদণ্ড হইতে রক্ষা করিবার জন্ত বিস্তর চেষ্টা করিয়াছে, কিন্তু অবশেষে তাহার নিকট পরাস্ত মানিয়াছে। שר যেদিন একরত্তি বয়সে একটি কালোকোলে ছোটোখাটো মেয়ে তাহার গোলগাল মুখটি লইয়। খেলার পুতুল ফেলিয়া বাপের ঘর হইতে শ্বশুরঘরে আসিল, সেদিন রাত্রে শুভলগ্নের সময় আজিকার দিনের কথা কে কল্পনা করিতে পারিত । তাহার বাপ মরিবার সময় এই বলিয়া নিশ্চিন্ত হইয়াছিল যে, যাহা হউক আমার মেয়েটির একটি সদগতি করিয়া গেলাম । জেলখানায় ফাসির পূর্বে দয়ালু সিভিল সার্জন চন্দরাকে জিজ্ঞাসা করিল, “কাহাকেও দেখিতে ইচ্ছা কর ?”