পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৯৮ রবীন্দ্র-রচনাবলী অসমর্থ বিবাহের পর তাহার হাতে পড়িলেই তাহার স্বভাবের পরিবর্তন হইবে। এবং ক্রমশ ইহাও বিশ্বাস করিলেন যে, মৃন্ময়ীর মুখখানি মুন্দর। কিন্তু তখনই আবার তাহার খর্ব কেশরাশি তাহার কল্পনাপধে উদিত হইয়। হৃদয় নৈরাখে পূর্ণ করিতে লাগিল, তথাপি আশা করিলেন, দৃঢ় করিয়া চুল বাধিয়া এবং জবজবে করিয়া তেল লেপিয়া কালে এ ক্রটিও সংশোধন হইতে পারিবে। 墨* পাড়ার লোকে সকলেই অপূর্বর এই পছন্দটিকে অপূর্ব-পছন্দ বলিয়া নামকরণ করিল। পাগলী মৃন্ময়ীকে অনেকেই ভালোবাসিত কিন্তু তাই বলিয়া নিজের পুত্রের বিবাহযোগ্য বলিয়া কেহ মনে করিত না । মৃন্ময়ীর বাপ ঈশান মজুমদারকে যথাকালে সংবাদ দেওয়া হইল। সে কোনো একটি স্টীমার কোম্পানির কেরানিরূপে দূরে নদীতীরবর্তী একটি ক্ষুদ্র স্টেশনে একটি ছোটো টিনের ছাদবিশিষ্ট কুটিরে মাল ওঠানো-নাবানো এবং টিকিট বিক্রয়কার্ষে নিযুক্ত झेिल । তাহার মুন্ময়ীর বিবাহপ্রস্তাবে দুই চক্ষু বহিয়া জল পড়িতে লাগিল। তাহার মধ্যে কতখানি দুঃখ এবং কতখানি আনন্দ ছিল পরিমাণ করিয়া বলিবার কোনো উপায় নাই । কন্যার বিবাহ উপলক্ষে ঈশান হেড আপিসের সাহেবের নিকট ছুটি প্রার্থনা করিয়া দরখাস্ত দিল। সাহেব উপলক্ষটা নিতান্তই তুচ্ছঙ্গান করিয়া ছুটি নামঞ্জুর করিয়া দিলেন। তখন, পূজার সময় এক সপ্তাহ ছুটি পাইবার সম্ভাবনা জানাইয়া সে পর্যন্ত বিবাহ স্থগিত রাখিবার জন্য দেশে চিঠি লিখিয়া দিল, কিন্তু অপূর্বর মা কহিল, এই মাসে দিন ভালো আছে আর বিলম্ব করিতে পারিব না। উভয়তই প্রার্থনা অগ্রাহ হইলে পর ব্যথিতহৃদয় ঈশান আর কোনো আপত্তি না করিয়া পূর্বমতে মাল ওজন এবং টিকিট বিক্রয় করিতে লাগিল । অতঃপর মৃন্ময়ীর মা এবং পল্লীর যত বর্ষীয়সীগণ সকলে মিলিয়া ভাবী কর্তব্য সম্বন্ধে মৃন্ময়ীকে অহৰ্নিশি উপদেশ দিতে লাগিল। ক্রীড়াসক্তি, শ্ৰুতগমন, উচ্চহাস্ত, বালকদিগের সহিত আলাপ এবং ক্ষুধা অনুসারে ভোজন সম্বন্ধে সকলেই নিষেধ পরামর্শ দিয়া বিবাহটাকে বিভীষিকারূপে প্রতিপন্ন করিতে সম্পূর্ণ কৃতকার্ধ হইল। উৎকণ্ঠিত শঙ্কিতহয়ে মৃন্ময়ী মনে করিল তাহার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং তদবসানে ফাসির হুকুম হুইয়াছে। * সে দুষ্ট পোনি ঘোড়ার মতো ঘাড় বাকাইয়া পিছু হটিয়া বলিয়া বসিল, “আমি বিবাহ করিব না।” :