পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭°8 রবীন্দ্র-রচনাবলী না,যাহা সে ক্ষালন করিতে চেষ্টা করিতে পারে। এই নীরব অভিযোগ নিস্তন্ধ অভিমান লেীহভারের মতো সমস্ত ঘরকন্নার উপর অটলভাবে চাপিয়া রহিল। অবশেষে অসহ হইয়া উঠিলে অপূর্ব আসিয়া কহিল, “ম, কলেজ খুলেছে, এখন আমাকে আইন পড়তে যেতে হবে।” মা উদাসীন ভাবে কহিলেন, “বউয়ের কী করবে।” অপূর্ব কহিল, “বউ এখানেই থাক।”মা কহিলেন, “না বাপু, কাজ নাই। তুমি তাকে তোমার সঙ্গেই নিয়ে যাও।” সচরাচর মা অপূর্বকে তুই সম্ভাষণ করিয়া থাকেন। অপূর্ব অভিমানক্ষঃস্বরে কহিল, “আচ্ছা।” কলিকাতা যাইবার আয়োজন পড়িয়া গেল। যাইবার আগের রাত্রে অপূর্ব বিছানায় আসিয়া দেখিল, মৃন্ময়ী কাদিতেছে । হঠাৎ তাহার মনে আঘাত লাগিল । বিষন্নকণ্ঠে কহিল, “মৃন্ময়ী, আমার সঙ্গে কলকাতায় যেতে তোমার ইচ্ছে করছে না ?” মৃন্ময়ী কহিল, “না।” অপূর্ব জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি আমাকে ভালোবাস না?” এ-প্রশ্নের কোনো উত্তর পাইল না। অনেক সময় এই প্রশ্নটির উত্তর অতিশয় সহজ কিন্তু আবার এক-একসময় ইহার মধ্যে মনস্তত্ত্বঘটিত এত জটিলতার সংস্রব থাকে যে, বালিকার নিকট হইতে তাহার উত্তর প্রত্যাশা করা যায় না। অপূর্ব প্রশ্ন করিল, “রাখালকে ছেড়ে যেতে তোমার মন কেমন করছে ? ” মৃন্ময়ী অনায়াসে উত্তর করিল, “হঁ।” বালক রাখালের প্রতি এই বি. এ পরীক্ষোৰ্ত্তীর্ণ কৃতবিদ্য যুবকের সূচির মতো অতিস্বন্ধ অথচ অতি স্বতীয় ঈর্ষার উদয় হইল। কহিল, “আমি অনেককাল আর বাড়ি আসতে পাব না।” এই সংবাদ সম্বন্ধে মৃন্ময়ীর কোনো বক্তব্য ছিল না। “বোধ হয় দু-বৎসর কিংবা তারও বেশি হতে পারে।” মৃন্ময়ী আদেশ করিল “তুমি ফিরে আসবার সময় রাখালের জন্যে একটা তিনমুখে। রজাসের ছুরি কিনে নিয়ে এসো ।” অপূর্ব শয়ান অবস্থা হইতে ঈষৎ উখিত হইয়া কহিল, “তুমি তাহলে এইখানেই থাকবে ?” 瞿 মৃন্ময়ী কহিল, “হা, আমি মায়ের কাছে গিয়ে থাকব ।” অপূর্ব নিশ্বাস ফেলিয়া কহিল, ”আচ্ছ, তাই থেকে। যতদিন না তুমি আমাকে আসবার জন্তে চিঠি লিখবে, আমি জাসব না। খুব খুশি হলে ?” ده .