পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ●»ፃ পাহারাওয়ালার হস্তে বন্দী হইয়া একখানি মলিন চীর পরিয়া বাহিরে দাড়াইয় রহিয়াছে। সে বিপিনের ভ্রাতা । ডেপুটি ম্যাজিস্টেটের সহিত বিপিনের বন্ধুত্ব ছিল। মকদ্দমা একপ্রকার গোলমাল করিয়া ফাসিয়া গেল। এবং অছিমও অল্পদিনের মধ্যে পূর্বাবস্থা ফিরিয়া পাইল। কিন্তু তাহার কারণ সে-ও বুঝিতে পারিল না, অন্ত লোকেও আশ্চর্ষ হইয়া গেল । * মকদ্দমার সময় কৃষ্ণগোপাল আসিয়াছিলেন সে-কথা রাষ্ট্র হইতে বিলম্ব হইল না। সকলেই নানা কথা কানাকানি করিতে লাগিল । স্বল্পবুদ্ধি উকিলেরা ব্যাপারটা সমস্তই অনুমান করিয়া লইল । রামতারণ উকিলকে কৃষ্ণগোপাল নিজের খরচে লেখাপড়া শিখাইয়া মানুষ করিয়াছিলেন। সে বরাবরই সন্দেহ করিত, কিন্তু এতদিনে সম্পূর্ণ বুঝিতে পারিল যে, ভালো করিয়া অনুসন্ধান করিলে সকল সাধুই ধরা পড়ে। যিনি যত মালা জপুন পৃথিবীতে আমার মতোই সব বেটা। সংসারে সাধু অসাধুর মধ্যে প্রভেদ এই যে, সাধুরা কপট আর অসাধুরা অকপট । যাহা হউক কৃষ্ণগোপালের জগদ্বিখ্যাত দয়াধর্মমহত্ত্ব সমস্তই যে কাপট্য ইহাই স্থির করিয়া রামতারণের ষেন এতদিনকার একটা দুর্বোধ সমস্তার পূরণ হইল এবং কী যুক্তি অনুসারে জানি না, তাহাতে কৃতজ্ঞতার বোঝাও যেন স্কন্ধ হইতে লঘু হইয়া গেল। ভারি আরাম পাইল । অগ্রহায়ণ, ১৩e • খাতা লিখিতে শিখিয়া অবধি উমা বিষম উপদ্রব আরম্ভ করিয়াছে। বাড়ির প্রত্যেক ঘরের দেয়ালে কয়লা দিয়া বাক লাইন কাটিয়া বড়ে বড়ো কাচা অক্ষরে কেবলই লিখিতেছে—জল পড়ে, পাতা নড়ে। তাহার বউঠাকুরানীর বালিশের নিচে ’হরিদাসের গুপ্তকথা” ছিল, সেটা সন্ধান করিয়া বাহির করিয়া তাহার পাতায় পাতায় পেনসিল দিয়া লিখিয়াছে—কালো জল, লাল ফুল। বাড়ির সর্বদাব্যবহাৰ নূতন পঞ্জিকা হইতে অধিকাংশ তিধিনক্ষত্র খুব বড়ে বড়ো অক্ষরে একপ্রকার লুপ্ত করিয়া দিয়াছে। বাবার দৈনিক হিসাবের খাতায় জমাখরচের মাঝখানে লিখিয়া রাখিয়াছে—লেখাপড় করে যেই গাড়িঘোড় চড়ে সেই। '