পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিচয় & e > হাত-পা ছোড়ায় জল খুলাইরাফেনাইয়া উঠিতেছে —সে জানেও না এত বেশি হাসফাস করার যথার্থ প্রয়োজন নাই। মুশকিল এই যে দৈত্যটার দৃঢ় বিশ্বাস ষে প্রচণ্ড জোরে হাত পা ছোড়াটারই একটা বিশেষ মূল্য আছে। যেদিন পূর্ণতার সরল সত্য সভ্যতার অন্তরের মধ্যে আবিস্তৃত হইবে সেদিন পাশ্চাত্ত্য বৈঠকখানার দেয়াল হইতে জাপানি পাখা, চীনবাসন, হরিণের শিং, বাঘের চামড়া,—তার এ কোণ ও কোণ হইতে বিচিত্র নিরর্থকতা দুঃস্বপ্নের মতো ছুটিয়া যাইবে ; মেয়েদের মাথার টুপিগুলা হইতে মরা পাখি, পাখির পালক, নকল ফুল পাতা এবং রাশিরাশি অদ্ভুত জঞ্জাল খসিয়া পড়িবে ; তাদের সাজসজ্জার অমিতাচার বর্বরতার পুরাতত্ত্বে স্থান পাইবে, যে-সব পাচতলা দশতলা বাড়ি আকাশের আলোর দিকে ঘুষি তুলিয়া দাড়াইয়াছে তারা লজ্জায় মাথা হেঁট করিবে ; শিক্ষা বল, কর্ম বল, ভোগ বল, সহজ হইয়া ওঠাকেই আপনার শক্তির সত্য পরিচয় বলিয়া গণ্য করিবে ; এবং মানুষের অন্তরপ্রকৃতি বাহিরের দালরাজাদের রাজত্ব কাড়িয়া লইয়া তাহাদিগকে পায়ের তলায় বসাইয়। রাখিবে। একদিন পশ্চিমের মৈত্রেয়ীকেও বলিতে হইবে, যেনাহং নামৃত স্তাম্ কিমহং তেন কুর্ষাম্। সে কবে হুইবে ঠিক জানি না । ততদিন ঘাড় হেঁট করিয়া আমাদিগকে উপদেশ শুনিতে হুইবে যে, প্রভূত আসবাবের মধ্যে বড়ো বাড়ির উচ্চতলায় বসিয়া শিক্ষাই উচ্চশিক্ষা । কারণ মাটির তলাটাই মানুষের প্রাইমারি, ওইটেই প্রাথমিক ; ইটের কোটা যত বড়ো হা করিয়া হাই তুলিবে বিস্তা ততই উপরে উঠতে থাকিবে। একদা বন্ধুরা আমার সেই মেঠো বিদ্যালয়ের সঙ্গে একটা কলেজ জুড়িবার পরামর্শ দিয়াছিলেন। কিন্তু একদিন আমাদের দেশের ষে উচ্চশিক্ষা তরুতলকে অশ্রদ্ধা করে নাই আজ তাকে তৃণাসন দেখাইলে সে কি সহিতে পারিবে ? সে যে ধনী পশ্চিমের পোষ্যপুত্র, বিলিতি বাপের কায়দায় সে বাপকেও ছাড়াইয়া চলিতে চায়। যতই বলি না কেন, শিক্ষাটাকে যতদূর পারি উচ্চেই রাখিব, কায়দাটাকে আমাদের মতো করিতে দাও—সে কথায় কেহ কান দেয় না। বলে কি না, ওই কায়দাটাই তো শিক্ষা, তাই তোমাদের ভালোর জন্তেই ওই কায়াটাকে যথাসাধ্য দুঃসাধ্য করিয়া তুলিব। কাজেই আমাকে বলিতে হইল, অন্তঃকরণকেই আমি বড়ো বলিয়া মানি, উপকরণকে তার চেয়েও বড়ো বলিয়া মানিব না । উপকরণ যে অংশে "অন্তঃকরণের অনুচর সে অংশে তাকে অমান্ত করা দীনতা একথা জানি । কিন্তু সেই সামঞ্জস্তটাকে স্কুরোপ এখনও বাহির করিতে পারে নাই ; ৰাছিন্ন করিবার চেষ্টা করিতেছে। আমাদের নিজের মতে আমাদিগকেও সেই চেষ্টা করিতে কেন পাক নিয়ম করিয়া বাধা দেওয়া হইবে ? প্রয়োজনকে খর্ব না করিয়াও: