পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৫

পরিচয় & 89 . আগতের ক্ষণিক মিলনশষ্য পাতিয়াছ। ষে বর্তমানটুকুর জন্ত অতীতের চতুৰ্ণোলী দ্বারের কাছে অপেক্ষা করিয়া আছে, তুমি তারই মুখচুম্বন করিতেছ, তোমার হাসিতে চোখের জল গড়াইয়া পড়িতেছে। মাটির কস্তার আগমনীর গান এই তো সেদিন বাজিল। মেঘের নদীভূদী শিঙা বাজাইতে বাজাইতে গৌরী শারদকে এই কিছু দিন হইল ধরা-জননীর কোলে রাখিয়া গেছে। কিন্তু বিজয়ায় গান বাজিতে আর তো দেরি নাই ; শ্মশানবালী পাগলট এল বলিয়া,—তাকে তে ফিরাইয়া দিবার জো নাই –হাসির চন্দ্রকলা তার ললাটে লাগিয়া আছে, কিন্তু তার জটায় জটায় কারার মন্দাকিনী । । শেষকালে দেখি ওই পশ্চিমের শরৎ আর এই পূৰ্বদেশের শরৎ একই জায়গায় আসিয়া অবসান হয়—সেই দশমী রাত্রির বিজয়ার গানে। পশ্চিমের কবি শরতের দিকে তাকাইয়া গাহিতেছেন, “বলন্ত তার উৎসবের সাজ বৃথা সাজাইল, তোমার নিঃশব্দ ইঙ্গিতে পাতার পর পাতা খসিতে খসিতে সোনার বৎসর আজ মাটিতে মিশিয়া মাটি হইল যে ”—তিনি বলিতেছেন, “কাত্তনের মধ্যে মিলন-পিপাসিনীর ষে রস-ব্যাকুলত৷ তাহা শাস্ত হইয়াছে, জ্যৈষ্ঠের মধ্যে তপ্ত-নিশ্বাস-বিক্ষুব্ধ যে হৃৎস্পন্দন তাহা স্তন্ধ হইয়াছে । ঝড়ের মাতনে লণ্ডভণ্ড অরণ্যের গায়ন সভায় তোমার ঝড়ো বাতাসের দল তাহাদের প্রেতলোকের রুদ্রবীণায় তার চড়াইতেছে তোমারই মৃত্যুশোকের বিলাপগান গাহিবে বলিয়া । তোমার বিনাশের শ্ৰী তোমার সৌন্দর্বের বেদন ক্রমে সুতীব্র হইয়া উঠিল, হে বিলীয়মান মহিমার প্রতিরূপ !” কিন্তু তবুও পশ্চিমে যে শরৎ, বাম্পের ঘোমটায় মুখ ঢাকিয় আসে, আর আমাদের ঘরে যে শরৎ মেঘের ঘোমটা সরাইয়া পৃথিবীর দিকে হাসি মুখখানি নামাইয়া দেখা দেয়, তাদের দুইয়ের মধ্যে রূপের এবং ভাবের তফাত আছে (আমাদের শরতে আমগমনীটাই ধুয়া । সেই ধুয়াতেই বিজয়ার গানের মধেও উৎসবের তান লাগিল। আমাদের শরতে বিচ্ছেদ-বেদনার ভিতরেও একটা কথা লাগিয়া আছে যে, বারে বারে নূতন করিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া আসিবে বলিয়াই চলিয়া যায়-তাই ধরার আঙিনায় আগমনী-গানের আর অন্ত নাই। ষে লইয়া যায় সেই আবার ফিরাইয়া আনে। তাই সকল উৎসবের মধ্যে বড়ে উৎসব এই হারাইয়া ফিরিয়া পাওয়ার উৎসব। কিন্তু পশ্চিমে শরতের গানে দেখি পাইয়া হারানোর কথা । তাই কবি গাহিতেছেন, “তোমার আবির্ভাবই তোমার তিরোভাব । যাত্রা এবং বিদায় এই তোমার ধুয়া, তোমার জীবনটাই মরণের আড়ম্বর ; আর তোমার সমারোহের পরম পূর্ণতার মধ্যেও ভূমি মায়া, তুমি স্বপ্ন।” 醫 >७३२