পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কর্তার ইচ্ছায় কর্ম Q & X যথেচ্ছাচারী ততই সে ভয়ংকর, ততই তার কাছে নতিস্ততি । বিশ্বকতৃত্বের এই ধারণার লজে তখনকার রাষ্ট্ৰীয় কতৃত্বের যোগ ছিল । কবিকঙ্কণের ভূমিকাতেই তার খবর মেলে। আইন নাই, বিচার নাই, জোর ষার মুলুক তার ; প্রবলের অত্যাচারে বাধ৷ দিবার কোনো বৈধ পথ নাই ; দুর্বলের একমাত্র উপায় স্তবস্তুতি, ঘুঘঘাষ এবং অবশেরে পলায়ন । দেবচরিত্র-কল্পনাতেও যেমন, সমাজেও তেমন, রাষ্ট্ৰতন্ত্রেও সেইরূপ । * . l অথচ একদিন উপনিষদে বিধাতার কথা বলা হইয়াছিল, যাথাতথ্যতোংখান ব্যদধাং শাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ । অর্থাৎ তার বিধান যথাতথ, তাহা এলোমেলো নয় এবং সেবিধান শাশ্বত কালের । তাহা নিত্যকাল হইতে এবং নিত্যকালের জন্য বিহিত, তাহা মুহূর্তে মুহূর্তে নূতন নূতন খেয়াল নয়। সুতরাং সেই নিত্যবিধানকে আমরা প্রত্যেকেই জ্ঞানের দ্বারা বুঝিয়া কর্মের দ্বারা,আপন করিয়া লইতে পারি। তাকে যতই পাইব ততই নূতন নূতন বাধা কাটাইয়া চলিব। কেননা, ষে-বিধানে নিত্যত আছে কোথাও সে একেবারে ঠেকিয়া যাইতে পারে না, বাধা সে অতিক্রম করিবেই। এই নিত্য এবং যথাতধ বিধানকে যথাতথরূপে জানাই বিজ্ঞান । সেই বিজ্ঞানের জোরে যুরোপের মনে এতবড়ো একটা ভরসা জন্মিয়াছে যে, সে বলিতেছে, ম্যালেরিয়াকে বিদায় করিবই, কোনো রোগকেই টিকিতে দিব না, জ্ঞানের অভাব অল্পের অভাব লোকালয় হইতে দূর হইবেই, মানুষের ঘরে যে-কেহ জন্মিবে সকলেই দেহে মনে সুস্থ সবল হইবে এবং রাষ্ট্ৰতন্ত্রে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের সহিত বিশ্বকল্যাণের সামঞ্জস্ত সম্পূর্ণ হইয়া উঠিবে। আধ্যাত্মিক অর্থে ভারতবর্ষ একদিন বলিয়াছিল, অবিদ্যাই বন্ধন, মুক্তি জ্ঞানে ; সত্যকে পাওয়াতেই আমাদের পরিত্রাণ। অসত্য কাকে বলে ? নিজেকে একান্ত বিচ্ছিন্ন করিয়া জানাই অসত্য। সর্বভূতের সঙ্গে আত্মার মিল জানিয়া পরমাত্মার সঙ্গে আধ্যাত্মিক যোগটিকে জানাই সত্য জানা। এতবড়ো সত্যকে মনে আনিতে পারা যে কী পরমাশ্চর্ধ ব্যাপার তা আজ আমরা বুঝিতেই পারিব না। এদিকে আধিভৌতিক ক্ষেত্রে যুরোপ ষে-মুক্তির সাধনা করিতেছে তারও মূল কথাটা এই একই। এখানেও দেখা যায় অবিস্তাই বন্ধন, সত্যকে পাওয়াতেই মুক্তি। সেই বৈজ্ঞানিক সত্য মানুষের মনকে বিচ্ছিন্নত হইতে বিশ্বব্যাপিকতায় লইয়া যাইতেছে এবং সেই পথে মানুষের বিশেষ শক্তিকে বিশ্বশক্তির সহিত যোগযুক্ত করিতেছে। । ভারতে ক্রমে ঋষিদের যুগ, অর্থাৎ গৃহস্থ তাপসদের যুগ গেল ; ক্রমে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর যুগ আসিল। ভারতবর্ষ ষে মহাসত্য পাইরাঞ্ছিল তাহাকে জীবনের ব্যবহারের পথ হইতে তফাত করিয়া দিল। বলিল, সন্ন্যাসী হইলে তবেই মুক্তির সাধন সম্ভবপর হয়।