পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

総br রবীন্দ্র-রচনাবলী করে দিতেন। জ্ঞানের গভীর ব্যাপকতার সঙ্গে বিচারশক্তির স্বাভাবিক তীক্ষতার যোগে এটা সম্ভবপর হয়েছে। তাদের বিদ্যায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সাধনপ্রণালী সম্মিলিত হয়ে উৎকর্ষ লাভ করেছিল। অনেক পণ্ডিত আছেন, তারা কেবল সংগ্ৰহ করতেই জানেন, কিন্তু আয়ত্ত করতে পারেন না; তঁরা খনি থেকে তোলা ধাতুপিণ্ডটার সোনা এবং খাদ অংশটাকে পৃথক করতে শেখেন নি বলেই উভয়কেই সমান মূল্য দিয়ে কেবল বােঝা ভারি করেন। হরপ্রসাদ যে যুগে জ্ঞানের তপস্যায় প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। সে যুগে বৈজ্ঞানিক বিচারবুদ্ধির প্রভাবে সংস্কারমুক্ত চিত্ত জ্ঞানের উপাদানগুলি শোধন করে নিতে শিখেছিল। তাই স্কুল পাণ্ডিত্য নিয়ে বাঁধা মত আবৃত্তি করা তার পক্ষে কোনােদিন সম্ভবপর ছিল না। ভূয়োদর্শনের সঙ্গে সঙ্গে এই তীক্ষুদৃষ্টি এবং সেইসঙ্গে স্বচ্ছ ভাষায় প্রকাশের শক্তি আজও আমাদের দেশে বিরল। বুদ্ধি আছে কিন্তু সাধনা নেই এইটেই আমাদের দেশে সাধারণত দেখতে পাই, অধিকাংশ স্থলেই আমরা কম শিক্ষায় বেশি মার্কা পাওয়ার অভিলাষী। কিন্তু হরপ্রসাদ ছিলেন সাধকের দলে এবং তার ছিল দর্শনশক্তি। আমাদের সৌভাগ্যক্রমে সাহিত্যপরিষদে হরপ্রসাদ অনেকদিন ধরে আপনি বহুদৰ্শী শক্তির প্রভাব প্রয়োগ করবার উপযুক্ত ক্ষেত্র পেয়েছিলেন। রাজেন্দ্রলালের সহযোগিতায় এশিয়াটিক সোসাইটির বিদ্যাভাণ্ডারে নিজের বংশগত পাণ্ডিত্যের অধিকার নিয়ে তরুণ বয়সে তিনি যে অক্লান্ত তপস্যা করেছিলেন, সাহিত্যপরিষদকে তারই পরিণত ফল দিয়ে এতকাল সতেজ করে রেখেছিলেন। এমন সর্বাঙ্গীণ সুযোগ পরিষদ আর কি কখনো পাবে? যাঁদের কাছ থেকে দুর্লভ দান আমরা পেয়েই থাকি কোনোমতে মনে করতে পারি। নে যে, বিধাতার দক্ষিণ্যবাহী তাদের বাহুকে মৃত্যু কোনোদিনই নিশ্চেষ্ট করতে পারে। সেইজন্যে যে বয়সেই তাদের মৃত্যু হােক, দেশ অকালমৃত্যুর শোক পায়, তার কারণ আলোক নির্বাণের মুহূর্তে পরবতীদের মধ্যে তাদের জীবনের অনুবৃত্তি দেখতে পাওয়া যায় না। তবু বেদনার মধ্যেও মনে আশা রাখতে হবে যে, আজ যার স্থান শূন্য একদা যে-আসন তিনি অধিকার করেছিলেন সেই আসনেরই মধ্যে তিনি শক্তি সঞ্চার করে গেছেন এবং অতীতকালকে যিনি ধন্য করেছেন, ভাবী কালকেও তিনি অলক্ষ্যভাবে চরিতার্থ করবেন। > (? ए5शश•, ७७७br • প্রফুল্লচন্দ্র রায় আমরা দুজনে সহযাত্রী। কালের তরীতে আমরা প্ৰায় এক ঘাটে এসে পোঁচেছি। কর্মের ব্ৰতেও বিধাতা আমাদের কিছু মিল ঘটিয়েছেন। আমি প্ৰফুল্লচন্দ্ৰকে তীর সেই আসনে অভিবাদন জানাই। যে আসনে প্রতিষ্ঠিত থেকে তিনি যে দানের প্রভাবে ছাত্র নিজেকেই পেয়েছে। বিচারশক্তি, বোধশক্তি। সংসারে জ্ঞানতপস্বী দুর্লভ নয়, কিন্তু মানুষের মনের মধ্যে চরিত্রের ক্রিয়া প্রভাবে তাকে ক্রিয়াবান করতে পারেন এমন মনীষী সংসারে কদাচ দেখতে পাওয়া যায়। উপনিষদে কথিত আছে, যিনি এক তিনি বললেন, আমি বহু হব। সৃষ্টির মূলে এই আত্মবিসর্জনের ইচ্ছ। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের সৃষ্টিও সেই ইচ্ছার নিয়মে। র্তার ছাত্রদের মধ্যে তিনি বহু হয়েছেন, নিজের চিত্তকে সঞ্জীবিত করেছেন বহু চিত্তের মধ্যে। নিজেকে অকৃপণভাবে সম্পূর্ণ