পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰবন্ধ >○○ মহম্মদ ইকবাল S স্যার মহম্মদ ইকবালের কবিত্বের প্রতি সমগ্ৰ ভারতের শ্রদ্ধা নিবেদনে আপনাদের সহিত আন্তরিকভাবে যোগদান করিতেছি। উর্দু ভাষায় অনভিজ্ঞতার দরুন আমি তাহার রচিত প্ৰাঞ্জল মৌলিক রচনা পাঠের আনন্দ হইতে বঞ্চিত। এজন্য আমি সততই দুঃখ অনুভব করিয়া থাকি। দীর্ঘকাল জীবিত থাকিয়া তিনি দেশের সাহিত্যভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করুন, এই প্রার্থনা করি। লাহাের, ১৩ ডিসেম্বর ১৯৩৭ আনন্দবাজার পত্রিকা ১ পৌষ ১৩৪৪ • মহম্মদ ইকবাল ܔ ইকবালের মৃত্যুতে আমাদের সাহিত্যক্ষেত্রে যে স্থান শূন্য হইল, তাহা পূরণ হইতে দীর্ঘকাল লাগিবে। আমাদের সাহিত্যজীবনে ইহা একটা মারাত্মক আঘাত। জগতে আজ ভারতের স্থান অতি সংকীর্ণ, এই সময় ইকবালের মতো একজন কবিকে হারানাে তাহার পক্ষে খুবই কক্টের কথা। কারণ ইকবালের কবিতার একটা বিশ্বজনীন মূল্য ছিল। কলিকাতা ৮ বৈশাখ ১৩৪৫ আনন্দবাজার পত্রিকা ৯। বৈশাখ ১৩৪৫ এক সময়ে এশিয়া আপনার প্রাচীন সভ্যতার গর্ব করিত এবং বর্তমানের অবমাননা বিস্মৃতি হইবার জন্য গীেরবময় অতীতের দিকে দৃষ্টিপাত করিত। তৎপর আমাদের চক্ষুর সম্মুখেই অন্ধকার ও নৈরাশ্যের যুগ আসিল। এই সময়ে এশিয়া ইউরোপের হীন অনুকরণ করিয়া আপনার উপর হীনতার ছাপ মারিয়া দিল। কিন্তু অলৌকিক ঘটনার ন্যায় হঠাৎ নবযুগের আবির্ভাব হইল এবং এশিয়া আপনার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করিতে আরম্ভ করিল। সুদূর প্রাচ্যে জাপান নতুন যুগের প্রয়োজন মিটাইবার জন্য নিজ নিজ সম্পদ নিয়ােজিত করিয়া পৃথিবীর সর্বপ্রধান শক্তিসমূহের মধ্যে আপনার আসন ও মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত করিল। কিন্তু ভাবিতে দুঃখ হয় যে, ঔদ্ধত্য জাপানের ধ্বংসের পথ সুগম করিতেছে এবং আমরা আর তাহাকে এশিয়ার মর্যাদার পুনরুদ্ধারকারীরূপে দেখিতে পাই না। যে সময় নব জাগরিত তুরস্কের প্রতি আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল তখন কামালের মৃত্যু সংবাদ আসিল। এক সময়ে তুরস্ককে ইউরোপের রুগণ। ব্যক্তি’ আখ্যায় অভিহিত করা হইত, অবশেষে কামাল আসিয়া আমাদের সম্মুখে নূতন এশিয়ার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এই দৃষ্টান্ত আমাদিগকে প্রাচ্যে এক নবজীবনের আশা দিয়াছে। এই দিক হইতে কামালের তেজস্বিতা আমাদের সশ্রদ্ধ প্রশংসা লাভের যোগ্য। তাহার মৃত্যুতে তুরস্কের যেরূপ গুরুতর ক্ষতি হইল সমগ্র এশিয়ারও সেইরূপ ক্ষতি হইল। কামাল পাশার বীরত্ব কেবল যুদ্ধক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি মানুষের সর্বপ্রধান শত্রু অন্ধ কুসংস্কারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে অবিরাম সংগ্রাম চালাইয়া গিয়াছেন। তাহার স্বদেশবাসীর নিকট তিনি মুক্তিদাতা ছিলেন। আমাদের নিকট তিনি এক উচ্চ আদর্শস্বরূপ থাকিবেন। কারণ কুসংস্কার অপেক্ষা অনুৎকৃষ্টতর