পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S “ላ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী শুনিছ? আমি বলছি, ওটা খুলে ফেলা ভালো। দাও আমাকে। হাত টেনে নিতে উদ্যত। হাত সরিয়ে কুমুদিনী। আমি খুলছি। খুলে ফেললে মধুসূদন। দাও। ওটা আমাকে। কুমুদিনী। ওটা আমিই রেখে দেব। বিরক্তির স্বরে মধুসূদন। রেখে লাভ কী? মনে ভাবিছ এটা ভারি একটা দামি জিনিস। এ-সব জিনিস চোন? এ কিছুতেই তোমার পরা চলবে না, এই আমি বলে রাখছি। - কুমুদিনী। আমি পরব না। পুতির কাজ করা থলের মধ্যে আংটি রেখে দিলে মধুসূদন। ( উত্তেজিত ) কেন? এই তুচ্ছ জিনিসটার 'পরে এত দরদ কেন? তোমার তো জেদ কম নয়! কুমুদিনী নিরুত্তর এ আংটি তোমাকে দিলে কে? তোমার মা নাকি? সংকুচিত স্বরে কুমুদিনী। দাদা। মধুসূদন। দাদা! সে তো বােঝাই যাচ্ছে। নইলে এমন দশা কেন? শনির সিধকাঠি তোমার দাদাকেই মানায়। এ আমার ঘরে আনা চলবে না। এই বলে গেলুম। মনে রেখো। | প্ৰস্থান কুমুদিনী দ্রুতপদে লেখবার টেবিলের দেরাজ খুলে বুলি রেখে দিলে। দাদার টেলিগ্রামের কাগজ বুকের কাপড় থেকে বের করে মাথায় ঠেকালে। শ্যামাসুন্দরীর প্রবেশ শ্যামাসুন্দরী। মেতির মা তোমাকে একটু ছুটি দিয়েছে সেই ফাঁকে এসেছি; কাউকে তো কাছে ঘেঁষতে দেবে না, ঘিরে রাখবে তোমাকে, যেন সিধকাঠি নিয়ে বেড়াচ্ছি, বেড়া কেটে তোমাকে চুরি করে নিয়ে যাব। আমায় চিনতে পারছি না ভাই, আমি তোমার বড়ো জা, শ্যামাসুন্দরী- তোমার স্বামী আমার দেওর। আমরা তো ভেবেছিলুম শেষ পর্যন্ত জম-খরচের খাতাটাই হবে ওর বউ। তা ওই খাতার মধ্যে জাদু আছে ভাই, ওই খাতার জোরেই তো এত বয়সে এমন সুন্দরী জুটল। এখন হজম করতে পারলে হয়। ওইখানে খাতার মস্তর খাটে না। বুঝেছি, তা পছন্দ না হলেই বা কী, সাত পাক যখন ঘুরেছি তখন একুশ পাক উলটে ঘুরলেও ফাস খুলবে না। কুমুদিনী। কী কথা বলছ দিদি।