পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নাটক ও প্রহসন SSፄ নবীন। তা দিয়েছি, কিন্তু সহজ মনে দিইনি। বললেম, দাদা, এই ছবিটা থেকে একটা অয়েল পেন্টিঙ করিয়ে নিয়ে তোমার শোবার ঘরে রেখে দিলে হয় না? দাদা যেন উদাসীনভাবে বললে, "আচ্ছা, দেখা যাবে।" বলেই ছবিটা নিয়ে উপরের ঘরে চলে গেল। তার পরে কী হল ঠিক জানি নে। বোধ করি আপিসে যাওয়া হয় নি, আর ওই ছবিটাও ফিরে পাবার আশা রাখি নে। ] মোতির মা। তোমার বউরানীর জন্যে স্বৰ্গটাই খোওয়াতে যখন রাজি আছ, তখন নাহয় একখানা ছবিই বা খোওয়ালে। নবীন। স্বৰ্গটা সম্বন্ধে সন্দেহ আছে, ছবিটা সম্বন্ধে একটুও সন্দেহ ছিল না। এমন ছবি দৈবাৎ হয়। যে দুর্লভ লগ্নে ওঁর মুখটিতে লক্ষ্মীর প্রসাদ সম্পূর্ণ নেমেছিল, ঠিক সেই শুভযোগটি ওই ছবিতে ধরা পড়ে গেছে। এক-একদিন রাত্তিরে ঘুম থেকে উঠে আলো জুলিয়ে ওই ছবিটি দেখেছি। প্ৰদীপের আলোয় ওর ভিতরকার রূপটি যেন আরো বেশি করে দেখা যায়। মেতির মা। দেখো, আমার কাছে অত বাড়াবাড়ি করতে তোমার একটুও ভয় নেই? নবীন। ভয় যদি থাকত তা হলেই তোমার ভাবনার কথাও থাকত। ওঁকে দেখে আমার আশ্চর্য কিছুতে ভাঙে না। মনে করি আমাদের ভাগ্যে এটা সম্ভব হল কী করে? আমি যে ওঁকে বউরানী বলতে পারছি এ ভাবলে গায়ে কাটা দেয়। আর উনি যে সামান্য নবীনের মতো মানুষকেও হাসিমুখে কাছে বসিয়ে খাওয়াতে পারেন, বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডে এও এত সহজ হল কী করে? আমাদের পরিবারের মধ্যে সব চেয়ে হতভাগ্য আমার দাদা। যাকে সহজে পেলেন তাকে কঠিন করে বাঁধতে গিয়েই হারালেন। মোতির মা। বাস রে, বউরানীর কথায় তোমার মুখ যখন খুলে যায় তখন থামতে চায় না। নবীন। মেজেবিউ, জানি তোমার মনে একটুখানি বাজে। মোতির মা। না, কখখনো না। নবীন। হাঁ, অল্প একটু! কিন্তু এই উপলক্ষে একটা কথা মনে করিয়ে দেওয়া ভালো। নুরনগরে স্টেশনে প্রথম বউরানীর দাদাকে দেখে যে-সব কথা বলেছিলে, চলতি ভাষায় তাকেও বাড়াবাড়ি বলা চলে। মোতির মা। আচ্ছা, আচ্ছা, ও-সব তর্ক থাক, এখন কী বলতে চাচ্ছিলে বলে। নবীন। আমার বিশ্বাস, আজকালের মধ্যেই দাদা বউরানীকে ডেকে পাঠাবেন। বউরানী যে এত আগ্রহে বাপের বাড়ি চলে এলেন, আর তার পর থেকে এতদিন ফেরবার নাম নেই, এতে দাদার প্রচণ্ড অভিমান হয়েছে তা জানি। দাদা কিছুতেই বুঝতে পারেন না সোনার খাঁচাতে পাখির কেন লোভ নেই। নির্বোিধ পাখি! অকৃতজ্ঞ পাখি! মােতির মা। তা ভালোই তো, বড়োঁঠাকুর ডেকেই পাঠান-না। সেই কথাই তো ছিল। নবীন। আমার মনে হয়, ডাকবার আগেই বউরানী যদি যান ভালো হয়, দাদার ওইটুকু অভিমানের নাহয় জিত রইল। তা ছাড়া বিপ্রদাসবাবু তো চান বউরানী তীর সংসারে ফিরে যান, আমিই নিষেধ করেছিলুম। .. দরজার বাইরে থেকে কুমুদিনী। ঘরে ঢুকব কি? মোতির মা। তোমার ঠাকুরপো পথ চেয়ে আছেন। কুমুদিনীর প্রবেশ নবীন। জন্ম জন্ম পথ চেয়ে ছিলুম, এইবার দর্শন পেলুম। কুমুদিনী। আঃ ঠাকুরপো, এত কথা তুমি বানিয়ে বলতে পাের কী করে? নবীন। নিজেই আশ্চর্য হয়ে যাই, বুঝতে পারি নে। কুমুদিনী। আচ্ছা, চলো এখন খেতে যাবে।