পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নাটক ও প্রহসন RR) মোতির মা। আমার পরামর্শ না নিয়েই? নবীন। পরামর্শ নেবার সময় ছিল না। মোতির মা। তা হলে তো দেখছি তোমাকে পস্তাতে হবে। নবীন। অসম্ভব নয়। কুষ্টিতে আমার বুদ্ধিস্থানে আর কোনাে গ্রহ নেই, আছেন নিজের স্ত্রী। এইজন্যে সর্বদা তোমাকে হাতের কাছে রেখেই চলি। ব্যাপারটা হচ্ছে এই-- দাদা আজ হুকুম করলেন, বউরানীকে আনানাে চাই। আমি ফস করে বলে বসলেম, তুমি নিজে গিয়ে যদি কথাটা তোল’ ভালো হয়। দাদা কী মেজাজে ছিলেন, রাজি হয়ে গেলেন। তার পর থেকেই ভাবছি, cष्ट्र शाळाँी देी शुद्ध । মােতির মা। ভালো হবে না। বিপ্রদাসবাবুর যেরকম ভাবখানা দেখলুম, কী বলতে কী বলবেন, শেষকালে কুরুক্ষেত্রের লড়াই বেধে যাবে। এমন কাজ করলে কেন? নবীন। প্রথম কারণ, বুদ্ধির কোঠা ঠিক সেই সময়টাতেই শূন্য ছিল, তুমি ছিলে অমাত্র। দ্বিতীয় হচ্ছে, সেদিন বউরানী যখন বললেন “আমি যাব না', তার ভিতরকার মানেটা বুঝেছিলুম। তীর দাদা রুগণ শরীর নিয়ে কলকাতায় এলেন, তবু এক দিনের জন্যে মহারাজ দেখতে গেলেন না- এই অনাদরটা তার মনে সব চেয়ে বেজেছিল। নিজের বুদ্ধিতে কথাটা আমার হয়তো মনে আসত না— তুমিই আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছিলে। মোতির মা। কীরকম শুনি ? নবীন। ওই-যে সেদিন বললে, কুটুম্বিতার দায়িত্ব আত্মমর্যাদার দায়িত্বের চেয়েও বড়ো। তাই মনে করতে সাহস হল যে, মহারাজার মতো অত বড়ো লোকেরও বিপ্রদাসবাবুকে দেখতে যাওয়া উচিত। মোতির মা। কাজের সময় এত বাজে কথাও বলতে পার!! কী করা উচিত এখন সেই কথাটা ভাবো দেখি । নবীন। গোড়াতেই সকল কথার শেষ পর্যন্ত ভাবতে গেলে ঠকতে হয়। আণ্ড ভাবা উচিত, প্রথম কর্তব্যটা কী। সেটা হচ্ছে, বিপ্রদাসবাবুকে দাদার দেখতে যাওয়া। দেখতে গিয়ে তার ফলে যা হতে পারে তার উপায় এখনি চিন্তা করতে বসলে তাতে চিন্তাশীলতার পরিচয় দেওয়া হবে, কিন্তু সেটা হবে অতি-চিন্তাশীলতা। মোতির মা। কি জানি!! আমার বোধ হচ্ছে মুশকিল বাঁধবে। পরের দৃশ্য কুমুদিনী বিপ্রদাসের পায়ের কাছে বসে র্তার পায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ভূত্যের প্রবেশ । ভৃত্য। মহারাজ মধুসূদন এসেছেন। বিপ্রদাস। কুমু, তুই বাড়ির ভিতরে যা। তোকে হয়তো দরকার হবে না। [কুমুদিনীর ও ভূত্যের প্রস্থান মধুসূদনের প্রবেশ একটা অসমাপ্ত নমস্কারের দ্রুত আভাস দিয়ে খাটের পাশের একটা কেদারায় বসে মধুসূদন। কেমন আছেন বিপ্রদাসবাবু? শরীরটা তো তেমন ভালো দেখাচ্ছে না।