পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NR (bv. রবীন্দ্র-রচনাবলী “এমন ফেল-করা জিনিস নিয়ে করবে কী?” ‘ওকে প্রথম শ্রেণীতে পাস করাব।” “তাঁর পরে স্বহস্তে প্রাইজ দেবে নাকি?” কথা ছিল বর-কনের পরস্পর আলাপ জমাবার অবসর দেওয়া চাই, তাই বিয়ের জন্যে অপেক্ষা করতে হবে অন্তত আরো দু মাস। কিন্তু সেদিন বাঁশরির অনিমন্ত্রিত প্রবেশ দেখে কন্যাপক্ষ সকলে ভয় পেয়ে গেল। বুঝল যে দূর্গ আক্রমণ শুরু হল। সন্ন্যাসীর গাঁথা দেয়াল যদি কোনো মেয়ে টলাতে পারে, সে এক বাঁশরি। দিন-পনেরোর মধ্যে বিয়ে স্থির হল। বাইরে বাঁশরির উচ্চহাসি উচ্চতর হতে লাগল, কিন্তু ভিতরে যদি কারো দৃষ্টি পৌঁছত দেখতে পেত পিজারের মধ্যে সিংহিনী ঘুরছে ল্যাজ আছড়িয়ে। বেলা দশটা হবে, সোমশংকর বসে আছে বারান্দায়, সামনে মেঝের উপর বসেছে। জহরী নানাপ্রকার গয়নার বাক্স খুলে, রেশমি ও পশমি কাপড়ের গাঠরি নিয়ে সুযোগের অপেক্ষা করছে। কাশ্মীরি দোকানদার, এমন সময় কোনো খবর না দিয়েই এসে উপস্থিত বাঁশরি। বললে, “ঘরে চলো।” দুজনে গৈল বৈঠকখানায়। সোফায় বসল সোমশংকর, বাঁশরি বসল। পাশেই। বললে, “ভয় নেই, কান্নাকাটি করতে আসি নি। তা হােক তবু তোমার ভাবনা ভাববার অধিকার আমাকে দিয়েছ, তাই একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, জােন কি তুমি, যে সূষমা তোমাকে ভালোবাসে না।” ‘জানি।” “তাতে তোমার কিছুই যায় আসে না।” “কিছুই না।” “তা হলে সংসারযাত্রােটা কীরকম হবে? “সংসারযাত্রার কথা ভাবছি নে ৷” “তবে কিসের কথা ভাবছ।” “ভাবছি। একমাত্র সুষমার কথা।” ‘অর্থাৎ তোমাকে ভালো না বেসেও কী করে ও সুখী হবে?” “সুষমার মতো মেয়ের সুখী হবার জন্যে ভালোবাসার দরকার নেই।” “এটা তোমার যোগ্য কথা হল না বাঁশরি- এটা যদি বলত কলুটােলার ঘোষগিন্নি আশ্চর্য হতুম না।” । i

  • “আচ্ছা, ভুল করেছি। কিন্তু প্রশ্নটার উত্তর বাকি আছে। কিসের দরকার আছে সুষমার।”

‘জীবনে ও একটা কোন লক্ষ্য ধরেছে, সেইটো ওর ধর্ম। সাধ্যমতে আমি যদি কিছু পরিমাণে তাকে সার্থক করতে পারি তা হলেই হল।” Վ. “লক্ষ্যটা কী বোধহয় জান না।” “জানিবার চেষ্টাও করি নি। যদি আপনা হতে ইচ্ছে ক'রে বলে জানতে পাব।” “অর্থাৎ ওর লক্ষ্য তুমি নও, তোমার লক্ষ্য ওই মেয়ে।” “তই বলতে পারি।” “এ তো পুরুষের মতো শোনাচ্ছে না, ক্ষত্রিয়ের মতো নয়ই।” “আমার পীেরুষ দিয়ে ওর জীবন সম্পূর্ণ করব, ওর ব্ৰত সাৰ্থক করব৷-- আর কিছু চাই নে আমি। আমার শক্তিকে ওর প্রয়োজন আছে। এই জেনে আমি খুশি৷ সেই কারণে সকলের মধ্যে আমাকেই ও বেছে নিয়েছে এই আমার গৌরব।” “এতবড়ো পুরুষকে মন্ত্ৰ পড়িয়েছে সন্ন্যাসী। বুদ্ধিকে ঘোলা করেছে, দৃষ্টিকে দিয়েছে চাপা।