পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NRVNR রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী বাঁশরির সামনে। বাঁশরি বললে, “মনে করেছিলাম হারিয়েছে, ফিরে পেয়ে আরো বেশি করে পেলুম। নিজের হাতে পরিয়ে দাও আমাকে।” সোেমশংকর একে-একে গয়নাগুলি পরিয়ে দিলে যত্ন করে। বাঁশরি বললে, “শক্ত আমার প্রাণ, তোমার কাছেও কোনাে দিন কেঁদেছি বলে মনে পড়ে না। আজকে যদি কঁদি কিছু মনে কোরো না।” এই বলে মাথা রাখল সোেমশংকরের বুকের উপর। বিবাহের আগের দিন সন্ধ্যাবেলা। সুষমাদের যে-ঘরে বিবাহ-সভা বসবে, যেখানে আসন পড়বে বর-কনের, সেখান থেকে সমস্ত লোকজন সরিয়ে দিয়ে, সুষমা একলা বসে মেঝের উপর একটা পদ্মফুলের আলপনা। এঁকেছে। থালায় আছে নানা জাতের ফুল ফল, ধূপ জুলছে, ইলেকট্রিক আলো নিবিয়ে প্ৰদীপ জ্বালানো হয়েছে। ঘরের দ্বারের কাছে সুষম বসে আছে চুপ করে। মুক্তারামকে ডেকে পাঠিয়েছে। এখনি সে আসবে। এল মুক্তারাম। সুষমা অনেকক্ষণ তার পায়ের উপর মাথা দিয়ে রইল পড়ে। তার পর সেই আলপনা-কাটা জায়গায় আসন পেতে বসালে তাকে। বললে, “প্ৰভু দুর্বল আমি, মনের গোপনে যদি পাপ থাকে আজ সমস্ত ধুয়ে দাও। আমার সমস্ত আসক্তি দূর হােক, জয়যুক্ত হােক তোমার বাণী। আজ সন্ধ্যায় এইখানে তোমার প্রসন্ন দৃষ্টির সামনে তোমার চরণস্পর্শে আমার নতুন জীবন আরম্ভ হােক। কাল থেকে তোমার ব্রতের পথে যাত্রা করে চলব। শেষ দিন পর্যন্ত।” মুক্তরাম উঠে দাঁড়ালে। কোনো কথা না বলে ডান হাতে স্পর্শ করলে সুষমার মাথা। সুষমা থালা থেকে ফুলগুলি নিয়ে মুক্তারামের দুই পা ঢেকে দিলে। পরিশিষ্ট পৃথীশ একখানা চিঠি পেলে। চলে গেল সব কাজ থেকে ছুটি নিয়ে ডেরাদুনে, একটা নিষ্ঠুর গল্প লেখবার জন্য। সকলের চেয়ে কালিমা লেপনে পূজনীয়ের চরিত্রে। এই তার প্রতিশোধ, তার সাস্তুনা। পাঠকেরা বুঝল কাদের লক্ষ্য করে লেখা, উপভোগ করলে কুৎসা, বললে এইটে নবযুগের বাংলা সাহিত্যের একটা শ্রেষ্ঠ অর্ঘ্য। একজন ভক্ত যখন লেখাটা মুক্তারামকে দেখালে, মুক্তারাম বললে— “লেখকের শক্তি আছে। রচনার।”