পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণবিহারী সেন গত জ্যৈষ্ঠ মাসে আমাদের সোদরপ্রতিম পরমাত্মীয় বন্ধু কৃষ্ণবিহারী সেনের পরলোকপ্ৰাপ্তি হইয়াছে। তঁহার বান্ধবেরা সকলেই অবগত আছেন অবিচলিত ধৈর্যে এবং অগাধ পণ্ডিত্যে তিনি যেমন প্ৰবীণ ছিলেন। তঁহার হৃদয়টি তেমনি বালকের মতো স্বচ্ছ সরল এবং সদাপ্রফুল্ল ছিল; সংসারের রোগ শোক দুশ্চিন্তা কিছুতেই তাঁহাকে পরাস্ত করিতে পারে নাই। তঁহার ন্যায় বহু অধ্যয়নশীল উদারবুদ্ধি সহৃদয় ব্যক্তি বঙ্গদেশে অতি বিরল। এই বন্ধুবৎসল স্বদেশহিতৈষী ঈশ্বরপ্রেমিক মহাত্মা মৃত্যুর কিছুকাল পূর্বে বঙ্গসাহিত্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন, সাধনা'র পাঠকগণ তাহার পরিচয় পাইয়াছেন। এই মনস্বী পুরুষের সহায়তায় বঙ্গভাষা বিশেষ আশান্বিত হইয়া উঠিয়াছিল; সে আশা পূর্ণ না করিয়াই তিনি অস্তৰ্হিত হইয়াছেন। নিম্নলিখিত কবিতাটি আমরা শোকাতুর ভক্তবন্ধুদত্ত পুষ্পাঞ্জলি স্বরূপে সেই মৃত মহাত্মার স্মরণার্থে উৎসর্গ করিলাম।— সখা ওহে কে বলিল নাহি তুমি আর! রোগতাপজর্জরিত ফেলি দেহভার অজর অমর রূপে হয়ে জ্যোতির্ময় নবাকাশে নবাবেশে হয়েছ উদয় । সে চিত্ৰ তুলিতে নারে চিত্রকর বটে, ওঠে না সে দেহছায়া ভানুচিত্রপটে, কিন্তু সেই সূক্ষ্মীছবি চিন্ময় কায়া চিদাকাশে সাদা ভাসে- দিব্য তার ছায়া। যন্ত্রণারও মাঝে যাহা হইত বিকাশ; অপ্রতিম ধৈর্য তব- আত্মার সে বলরোগ তাপ মাঝে যাহা থাকিত অটল; অনন্ত সে জ্ঞানস্পৃহা— ভেদিয়া আকাশ সুদূর নক্ষত্রমাঝে হত যা প্রকাশ; একনিষ্ঠ প্ৰেম সেই একপত্নীব্রত সখাসনে যার কথা হইত নিয়ত; এই সব সূক্ষ্মতত্ত্ব মিলি একসাথে জ্যোতির্ময় সূক্ষ্ম তনু রচিয়া তাহাতে কোন দিব্য পথে কোন সমুন্নত লোকে গেছ চলি— এড়াইয়া রোগ-তাপ-শোকে। সাধনা আষাঢ়, ১৩০২