পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩০ রবীন্দ্র-রচনাবলী ক্ষান্তমণি । তা হোক-না কবি, হয়েছে কী ? ইন্দু। কমলদিদি ওর বই লুকিয়ে পড়ে। সেইটেই খারাপ লক্ষণ। বিনোদবাবুর 'আঙুরলতা বইখানা ওর বালিশের নীচে থাকে। আর তার কাননকুস্থমিকা রেখেছে ধোবার বাড়ির হিসেবের খাতার তলায় । ক্ষান্তমণি। কিন্তু ওর মুখে তো বিনোদবাবুর নামও শুনি নি। ইন্দু। নামটা বুকের মধ্যে বাসা করেছে, তাই মুখে বের হতে চায় না । ক্ষান্তমণি। কী যে বলিস, বুঝতে পারি নে— ওর লেখায় এমন কী মন্ত্র আছে বল তো। আমাকে একটু নমুনা দে দেখি । ইন্দু। তবে শোনো— রসনায় ভাষা নাই, থাকি চুপে চুপে, অস্তরে জোগায় সে যে বাণী । সময় পায় না আঁখি মজিবারে রূপে, গোপনে স্বপনে তারে জানি । ক্ষাস্তমণি । হায় রে, কী শব্দভেদী বাণেরই নমুনা ! ইন্দু। কমলদিদি খাতায় লিখে রেখেছে, এই ওর জপের মন্ত্র। শব্দভেদী বাণের যে জোর কত তা প্রত্যক্ষ দেখতে চাও ? ক্ষান্তমণি । চাই বৈকি, জেনে রাখা ভালো । ইন্দু। ( নেপথ্যে চাহিয়া ) দিদি ! দিদি ! সেলাই হাতে কমলের প্রবেশ কমল। কেন ? হয়েছে কী ? ইন্দু। এখনো বিশেষ কিছু হয় নি, কিন্তু হতে কতক্ষণ ? বিধাতা আমাদের চেয়েও পর্দানশীন, আড়ালে বসে বসে তোমার সাধের স্বপ্নকে মূতি দিচ্ছেন। কমল । সে খবর দেবার জন্যে তোমায় ডাকাডাকি করতে হবে না। ইন্দু। তা জানি ভাই, খবর পাকা হলে বিধাতা আপনিই দূত পাঠিয়ে দেবেন। আমি সেজন্যে ভাবিও নি। সখীপরিষদে আমাকে গান গাইতে ধরেছে। স্বরলিপি থেকে তুমি যে নতুন গানটি শিখেছ আমাকে শিখিয়ে দাও। ক্ষাস্তদিদিও সেইজন্যে বসে আছেন— আমি জানি, তোমার গান উনি চন্দ্রবাবুর চটি জুতোর আওয়াজের প্রায় সমতুল্য বলেই জানেন। ক্ষাস্তমণি। ইন্দুর কথা শোনো একবার ! এ আবার আমি কবে বললুম!