পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যাত্রী 辭 8 o 3 বেগনি ফুলে হলদে ফুলে মাতামাতি। কে দেখে কে না দেখে তার খেয়াল নেই। এটা হল রূপের লীলা, কেবলমাত্র হয়ে ওঠাতেই আমন্দ । এই মেঠো ফুলের একটি মঞ্জরী তুলে ধরে আমি বলি, বাহবা। কেন বলি। ওতো খাবার জিনিস নয়, বেচবার জিনিস নয়, লোহার সিন্দুকে তালা বন্ধ করে রাখবার জিনিস নয়। তবে ওতে আমি কী দেখলুম যাতে আমার মন বললে “সাবাস” । বস্ত দেখলুম ? বন্ত তো একটা মাটির ঢেলার মধ্যে ওর চেয়ে অনেক বেশি আছে। তবে ? আমি দেখলুম, রূপ। সে কথাটার অর্থ কী রূপ ছাড়া আর কোনোই অর্থ নেই। রূপ শুধু বলে, “এই দেখে, আমি হয়ে উঠেছি।” যদি আমার মন সায় দিয়ে বলে “তাই তো বটে, তুমি হয়েছ, তুমি আছ” আর এই বলেই যদি সে চুপ করে যায়, তা হলেই সে রূপ দেখলে ; হয়ে-ওঠাকেই চরম বলে জানলে। কিন্তু, সজনে ফুল যখন অরূপসমূত্রে রূপের”ঢেউ তুলে দিয়ে বলে “এই দেখো আমি আছি", তখন তার কথাটা না বুঝে আমি যদি গোয়ারের মতো বলে বসি "কেন জাছ”— তার মুখ থেকে যদি অত্যন্ত মিথ্যে জবাব আদায় করে নিই, যদি তাকে দিয়ে বলাই “তুমি খাবে বলেই আছি”, তা হলে রূপের চরম রহস্তটা দেখা হল না। একটি ছোটো মেয়ে কোথা থেকে আমার যাত্রাপথে জুটে গেছে। তার বয়স আড়াই বছর। তার মধ্যে প্রাণের আনুন্দ টলমল করে ওঠে, কত মধুর প্রলাপে, কত মন-ভোলানো ভঙ্গীতে ; আমার মন বলে, “মন্ত একটা পাওনা আমি পেলুম।" কী ষে পেলুম তাকে হিসাবের অঙ্কে ছকে নেবার জো নেই। আর-কিছু নয়, একটি বিশেষ হয়ে-ওঠাকেই আমি চরম করে দেখলুম। ওই ছোট মেয়ের হয়ে-ওঠাই আমার পরম লাভ। ও আমার ঘর ঝাঁট দেয় না, রান্না করে না, তাতে ওর ওই হয়ে-ওঠার হিসাবটাতে কিছুই কম পড়ছে না। বৈজ্ঞানিক এর হয়তো একটা মোটা কৈফিয়ত দেবে, বলবে, “জীবজগতে বংশরক্ষাটাই সবচেয়ে বড়ো দরকার ; ছোটাে মেয়েকে স্বন্দর না লাগলে সেই দরকারটাতে বাধা পড়ে।” মোটা কৈফিয়তটাকে আমি সম্পূর্ণ অগ্রাহ করি নে, কিন্তু তার উপরেও একটা স্বল্প তত্ব আছে যার কোনো কৈফিয়ত নেই। একটা ফলের ভালি দেখলে মন খুশি হয়ে ওঠে, আর মাছের ঝোলের পাত্র দেখলে স্বারা নিরামিষাশী নয় তাদের মন খুশি হতে পারে ; আহারের প্রয়োজনটা উভয়তই আছে ; স্বতরাং খুশির একটা মোটা কৈফিয়ত উভয়তই পাওয়া যায়। তৎসত্বেও ফলের ডালিতে এমন একটি বিশেষ খুশি আছে যা কোনো কৈফিয়ত তলবই করে না। সেইখানে ওই একটি মাত্র কথা, ফলগুলি বলছে “আমি আছি”— আর আমার মন বলে, সেইটেই আমার লাভ। আমার জীবনযাত্রার এই আড়াই বছরের ক্ষুদ্রতম সহচরীটিও মানবের বংশয়ক্ষার কৈফিয়ত দাখিল করেও এমন কিছু বাকি রাখে যেটা বিশ্বের মর্যকুহর হতে