পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨(t8 রবীন্দ্র-রচনাবলী মধ্য হইতে শান্তি ও শৃঙ্খলা বিদায় লইল । এখন শুভবিবাহের পূর্বে, পুরুষকে বিবাহ করিতেছি না মেয়েকে বিবাহ করিতেছি, তাহা কোনোমতে নিশ্চয় করিতে না পারিয়া, বরকন্যা উভয়েরই চিত্ত আশঙ্কায় দুরু দুরু করিতে থাকে । আপনি বিরক্ত হইতেছেন ! একলা পড়িয়া থাকি, স্ত্রীর নিকট হইতে নির্বালিত ; দূর হইতে সংসারের অনেক নিগুঢ় তত্ত্ব মনের মধ্যে উদয় হয়—এগুলো ছাত্রদের কাছে বলিবার বিষয় নয়, কথাপ্রসঙ্গে আপনাকে বলিয়া লইলাম, চিন্তা করিয়া দেখিবেন । মোটকথাটা এই ষে, যদিচ রন্ধনে স্থন কম হইত না এবং পানে চুন বেশি হইত না, তথাপি ফণিভূষণের হৃদয় কী-যেন-কী নামক একটা দুঃসাধ্য উৎপাত অনুভব করিত। স্ত্রীর কোনো দোষ ছিল না, কোনো ভ্রম ছিল না, তৰু স্বামীর কোনো স্বথ ছিল না। সে তাহার সহধর্মিণীর শূন্যগহবর হৃদয় লক্ষ্য করিয়া কেবলই হীরামুক্তার গহন ঢালিত কিন্তু সেগুলা পড়িত গিয়া লোহার সিন্দুকে, হৃদয় শূন্তই থাকিত। খুড়া দুর্গামোহন ভালোবাসা এত স্বল্প করিয়া বুঝিত না, এত কাতর হইয়া চাহিত না, এত প্রচুর পরিমাণে দ্বিত না, অথচ খুড়ির নিকট হইতে তাহা অজস্র পরিমাণে লাভ করিত। ব্যবসায়ী হইতে গেলে নব্যবাবু হইলে চলে না এবং স্বামী হইতে গেলে পুরুষ হওয়া দরকার, এ কথায় সন্দেহমাত্র করিবেন না। ঠিক এই সময়ে শৃগালগুলা নিকটবর্তী ঝোপের মধ্য হইতে অত্যন্ত উচ্চৈঃস্বরে চিৎকার করিয়া উঠিল। মাস্টারমহাশয়ের গল্পস্রোতে মিনিটকয়েকের জন্য বাধা পড়িল । ঠিক মনে হইল, সেই অন্ধকার সভাদ্ভূমিতে কৌতুকপ্রিয় শৃগালসম্প্রদায় ইস্কুলমাস্টারের ব্যাখ্যাত দাম্পত্যনীতি শুনিয়াই হউক বা নবসভ্যতাপ্পুর্বল ফণিভূষণের আচরণেই হউক রহিয়া রহিয়া অট্টহাস্ত করিয়া উঠিতে লাগিল । তাহাদের ভাবোচ্ছাস নিবৃত্ত হইয়া জলস্থল দ্বিগুণতর নিস্তদ্ধ হইলে পর, মাস্টার সন্ধ্যার অন্ধকারে তাহার বৃহৎ উজ্জল চক্ষু পাকাইয়া গল্প বলিতে লাগিলেন— ফণিভূষণের জটিল এবং বহুবিস্তৃত ব্যবসায়ে হঠাৎ একটা ফাড়া উপস্থিত হইল । ব্যাপারটা কী তাহা আমার মতো অব্যবসায়ীর পক্ষে বোঝা এবং বোঝানো শক্ত । মোন্দা কথা, সহসা কী কারণে বাজারে তাহার ক্রেডিট রাখা কঠিন হইয়া পড়িয়াছিল । যদি কেবলমাত্ৰ পাচটা দিনের জন্যও সে কোথাও হইতে লাথদেড়েক টাকা বাহির করিতে পারে, বাজারে একবার বিদ্যুতের মতো এই টাকাটার চেহারা দেখাইয়া