পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

इब्ल רפא শুামের নাম রাধা শুনেছে। ঘটনাটা শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু যে-একটা অদৃশু বেগ জন্মালো তার আর শেষ নেই। আসল ব্যাপারটাই হল তাই । সেইজন্তে কবি ছন্দের ঝংকারের মধ্যে এই কথাটাকে দুলিয়ে দিলেন। যতক্ষণ ছন্দ থাকবে ততক্ষণ এই দোলা আর থামবে না । ‘সই, কেবা শুনাইল গুমিনাম”। কেবলই ঢেউ উঠতে লাগল। ওই কটি কথা ছাপার অক্ষরে যদিও ভালোমানুষের মতো দাড়িয়ে থাকার ভান করে, কিন্তু ওদের অন্তরের স্পন্দন আর কোনোদিনই শান্ত হবে না। ওরা অস্থির হয়েছে, এবং অস্থির করাই ওদের কাজ । আমাদের পুরাণে ছন্দের উৎপত্তির কথা বা বলেছে তা সবাই জানেন। দুটি পাখির মধ্যে একটিকে যখন ব্যাধ মারলে তখন বাল্মীকি মনে যে ব্যথা পেলেন সেই ব্যথাকে শ্লোক দিয়ে না জানিয়ে তার উপায় ছিল না । যে পাখিটা মারা গেল এবং আর যে একটি পাখি তার জন্তে কাদল তারা কোনকালে লুপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু এই নিদারুশতার ব্যথাটিকে তো কেবল কালের মাপকাঠি দিয়ে মাপা যায় না। সে-ষে অনন্তের বুকে বেজে রইল। সেইজন্তে কবির শাপ ছন্দের বাহনকে নিয়ে কাল থেকে কালাস্তরে ছুটতে চাইলে । হায় রে, আজও সেই ব্যাধ নানা অন্ত্র হাতে নানা বীভৎসতার মধ্যে নানা দেশে নানা আকারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু সেই আদিকবির শাপ শাশ্বতকালের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়ে রইল। এই শাশ্বতকালের কথাকে প্রকাশ করবার জন্তেই তো ছন্দ । আমরা ভাষায় বলে থাকি, কথাকে ছন্দে বাধা । কিন্তু এ কেবল বাইরে বঁাধন, অস্তরে মুক্তি। কথাকে তার জড়ধর্ম থেকে মুক্তি দেবার জন্যেই ছন্দ । সেতারের তার বাধা থাকে বটে কিন্তু তার থেকে স্বর পায় ছাড়া । ছন্দ হচ্ছে সেই তার-বাধা সেতার, কথার অন্তরের স্বরকে সে ছাড়া দিতে থাকে । ধন্থকের সে ছিলা, কথাকে সে তীরের মতো লক্ষ্যের মর্মের মধ্যে প্রক্ষেপ করে । গোড়াতেই ছন্দ সম্বন্ধে এতখানি ওকালতি করা হয়তো বাহুল্য বলে অনেকের মনে হতে পারে। কিন্তু আমি জানি, এমন লোক আছেন যারা ছন্দকে সাহিত্যের একটা কৃত্রিম প্রথা বলে মনে করেন। তাই আমাকে এই গোড়ার কথাটা বুঝিয়ে বলতে হল ষে পৃথিবী ঠিক চব্বিশ ঘণ্টার ঘূর্ণিলয়ে তিনশো পরবটি মাত্রার ছন্দে স্বৰ্ষকে প্রদক্ষিণ করে, লেও যেমন কৃত্রিম নয়, ভাবাবেগ তেমনি ছন্দকে আশ্রয় করে আপন গতিকে প্রকাশ করবার যে চেষ্টা করে লেও তেমনি কৃত্রিম নয় । এইখানে কাব্যের সঙ্গে গানের তুলনা করে আলোচ্য বিষয়টাকে পরিষ্কার করবার চেষ্টা করা বাক । *