পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७8२ রবীন্দ্র-রচনাবলী তোলা যেতে পারে। কিন্তু ছন্দের সিদ্ধান্ত তর্কে হয় না, ওটার মীমাংসা কানে । সৌভাগ্যক্রমে এ সভায় স্বযোগ পেয়েছি কানের দরবারে আরজি পেশ করবার। নয় মাত্রার চঞ্চল ভঙ্গিতে কান সায় দিচ্ছে না, এ কথা যদি স্বধীজন বলেন তা হলে অগত্য চুপ করে যাব, কিন্তু তবুও নিজের কানের স্বীকৃতিকে অশ্রদ্ধা করতে পারব না। ‘তাধার রজনী পোহালো’ কবিতাটি গানরূপে রচিত । সংগীতাচার্য ভীমরাও শাস্ত্রী মৃদঙ্গের বোলে একে যে তালের রূপ দিয়েছিলেন তাতে দুটি আঘাত এবং একটি ফাক। যথা— > २ () আঁধার | রজনী | পোহালো । এ কথা সকলেরই জানা আছে যে, ফাকটা তালের শেষ ঝোক, তার পরে পুনরাবর্তন । এই গানের স্বাভাবিক ঝোক প্রত্যেক তিন মাত্রায় এবং এর তালের অর্থাৎ ছন্দের সম্পূর্ণত তিনমাত্রাঘটিত তিন ভাগে। অমূল্যবাবু বা শৈলেন্দ্রবাবু যদি অন্ত কোনো রকমের ভাগ ইচ্ছা করেন তবে রচয়িতার ইচ্ছার সঙ্গে তার ঐক্য হবে না, এর বেশি আমার আর কিছু বলবার নাই। উত্তরদিগন্ত ব্যাপি দেবতাত্মা হিমাদ্রি বিরাজে, দুই প্রাস্তে দুই সিন্ধু, মানদণ্ড যেন তারি মাঝে ; এই ছন্দকে আঠারো মাত্রা যখন বলি তখন সমগ্র পদের মাত্রাসংখ্যা গণনা করেই বলে থাকি। আট মাত্রার পরে এর একটা সুস্পষ্ট বিরাম আছে বলে এর আঠারো মাত্রার সীমানার বিরুদ্ধে নালিশ চলে না । আমাদের হাতে তিন পর্ব আছে । মণিবন্ধ পর্যন্ত এক ; এটি ছোটো পর্ব , কনুই পর্যন্ত দুই , কনুই থেকে কাধ পর্যন্ত তিন ; যাকে আমরা সমগ্র বাহু বলি লে এই তিন পর্ব মিলিয়ে। আমাদের দেহে এক বাহু অন্ত বাহুর অবিকল পুনরাবৃত্তি। প্রত্যেক ছন্দেরই এমনিতরো একটি সম্পূর্ণ রূপকল্প অর্থাৎ প্যাটার্ন আছে। ছন্দোবদ্ধ কাব্যে সেই প্যাটার্নকেই পুনঃপুনিত করে। সেই প্যাটারনের সম্পূর্ণ সীমার মধ্যেই তার নানা পর্ব পর্বাঙ্গ প্রভৃতি যা-কিছু। সেই সমগ্র প্যাটারনের মাত্রাই সেই ছন্দের মাত্রা। ‘আধার রজনী পোহালো’ গানটিকে এইজন্তেই নয় মাত্রার বলেছি। যেহেতু প্রত্যেক নয় মাত্রাকে নিয়েই তার পুনঃপুন আবর্তন। কোন ছন্দ কী রকম ভাগ করে পড়তে হবে, এ নিয়ে মতাস্তর হওয়া অসম্ভব নয় । পুরাতন ছন্দগুলির নাম-অনুসারে সংজ্ঞা আছে। নতুন ছন্দের নামকরণ হয় নি। এইজন্তে তার আবৃত্তির কোনো নিশ্চিত নির্দেশ নেই। কবির কল্পনা এবং