পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ডাকঘর ף מג9א অমল । ক্ৰৌঞ্চদ্বীপ কিরকম দ্বীপ আমাকে বলো-না ফকির ! ঠাকুরদা। সে ভারি আশ্চর্য জায়গা। সে পাখিদের দেশ– সেখানে মাহুষ নেই। তারা কথা কয় না, চলে না, তারা গান গায় আর ওড়ে। o অমল। বা, কী চমৎকার! সমুদ্রের ধারে ? ঠাকুরদা। সমুদ্রের ধারে বৈকি। অমল । সব নীল রঙের পাহাড় আছে ? ঠাকুরদা। নীল পাহাড়েই তো তাদের বাস। সন্ধের সময় সেই পাহাড়ের উপর স্থর্যাস্তের আলো এসে পড়ে আর বাঁকে ঝাকে সবুজ রঙের পাখি তাদের বাসায় ফিরে আসতে থাকে— সেই আকাশের রঙে পাখির রঙে পাহাড়ের রঙে সে এক কাণ্ড হয়ে ওঠে। অমল। পাহাড়ে ঝরনা আছে ? * ঠাকুরদা। বিলক্ষণ ! ঝরনা না থাকলে কি চলে ! একেবারে হীরে গালিয়ে ঢেলে দিচ্ছে। আর, তার কী নৃত্য ! মুড়িগুলোকে ঠুং-ঠাং ঠুং-ঠাং করে বাজাতে বাজাতে কেবলই কল কল ঝর ঝর করতে করতে ঝরনাটি সমুদ্রের মধ্যে গিয়ে ঝাপ দিয়ে পড়ছে। কোনো কবিরাজের বাবার সাধ্য নেই তাকে একদণ্ড কোথাও আটকে রাখে। পাখিগুলো আমাকে নিতান্ত তুচ্ছ একটা মানুষ বলে যদি একঘরে করে না রাখত তা হলে ঐ ঝরনার ধারে তাদের হাজার হাজার বাসার একপাশে বাসা বেঁধে সমুদ্রের ঢেউ দেখে দেখে সমস্ত দিনটা কাটিয়ে দিতুম। অমল। আমি যদি পাখি হতুম তা হলে— । ঠাকুরদা। তা হলে একটা ভারি মুশকিল হত। শুনলুম, তুমি নাকি দইওআলাকে বলে রেখেছ বড়ো হলে তুমি দুই বিক্রি করবে— পাখিদের মধ্যে তোমার দইয়ের ব্যাবসাটা তেমন বেশ জমত না । বোধ হয় ওতে তোমার কিছু লোকসানই হত। । মাধব দত্ত । আর তো আমার চলল না। আমাকে স্কুদ্ধ তোমরা খেপিয়ে দেবে দেখছি। আমি চললুম। অমল। পিসেমশায়, আমার দইওআলা এসে চলে গেছে ? মাধব দত্ত। গেছে বৈকি। তোমার ঐ শখের ফকিরের তলপি বয়ে ক্ৰৌঞ্চদ্বীপের পাখির বাসায় উড়ে বেড়ালে তার তো পেট চলে না । সে তোমার জন্য এক ভাড় দই রেখে গেছে। বলে গেছে, তাদের গ্রামে তার বোনঝির বিয়ে— তাই সে কলমিপাড়ায় বাশির ফরমাশ দিতে যাচ্ছে— তাই বড়ো ব্যস্ত আছে। অমল । সে যে বলেছিল, আমার সঙ্গে তার ছোটো বোনবিটির বিয়ে দেবে।