পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

sss রবীন্দ্র-রচনাবলী .অথচ ছ দিনেই যায় স্থলে। চিরদিনের বাধা ব্যবস্থায় মন যায় না, উদ্ভট একটা-কিছু স্বষ্টি করে, আর স্ত্রীদের দায়িত্ব হচ্ছে মুখে ওদের মতে সায় দেওয়া এবং কাজে নিজের মতে চলা । এই স্বামী-পালনের দায় এত দিন আনন্দে বহন করে এসেছে শৰ্মিলা । এত কাল তো কাটল । নিজেকে বিবজিত করে শশাঙ্কের জগৎকে শমিলা কল্পনাই করতে পারে না। আজ ভয় হচ্ছে মৃত্যুর দূত এসে জগৎ আর জগদ্ধাত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটায় বুঝি বা । এমন-কি, ওর আশঙ্কা যে, মৃত্যুর পরেও শশাঙ্কের দৈহিক অধত্ব শৰ্মিলার বিদেহী আত্মাকে শান্তিহীন করে রাখবে। ভাগ্যে উমি ছিল । সে ওর মতো শান্ত নয়। তবুওর হয়ে কাজকর্ম চালিয়ে নিচ্ছে। সে কাজও তো মেয়েদের হাতের কাজ। ঐ স্নিগ্ধ হাতের স্পর্শ না থাকলে পুরুষদের প্রতিদিনের জীবনের প্রয়োজনে রস থাকে না যে, সমস্তই যে কিরকম শ্ৰীহীন হয়ে যায়। তাই উমি যখন তার স্বন্দর হাতে ছুরি নিয়ে আপেলের খোসা ছাড়িয়ে কেটে কেটে রাখে, কমলালেবুর কোয়াগুলিকে গুছিয়ে রাখে সাদা পাথরের থালার এক পাশে, বেদান ভেঙে তাঁর দানাগুলিকে যত্ন করে সাজিয়ে দেয়, তখন শমিলা তার বোনের মধ্যে যেন নিজেকেই উপলব্ধি করে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে তাকে সর্বদাই কাজের ফরমাশ করছে ওর সিগারেট-কেসটা ভরে দে-না, উমি । দেখছিস নে ময়লা রুমালটা বদলাবার খেয়াল নেই ? ঐ দেখ, জুতোটা সিমেণ্টে বালিতে জমে নিরেট হয়ে রয়েছে। বেহারাকে সাফ করতে হুকুম করবে তার হুশ নেই। বালিশের ওয়াড়গুলো বদলে দে-ন, ভাই । ফেলে দে ঐ ছেড়া কাগজগুলো ঝুড়ির মধ্যে । একবার আপিস-ম্বরটা দেখে আসিস তে উমি, আমি নিশ্চয় বলছি ওঁর ক্যাশবাক্সের চাবিটা ডেস্কের উপর ফেলে রেখে বেরিয়ে গেছেন। ফুলকোপির চারাগুলি তুলে পোতবার সময় হল, মনে থাকে যেন। মালীকে বলিস গোলাপের ডালগুলো ছেটে দিতে । ঐ দেখ, কোটের পিঠেতে চুন লেগেছে— এত তাড়া কিসের, একটু দাড়াও-না— উমি, দে তো বোন, বুরুশ করে। উর্মি বই-পড়া মেয়ে, কাজ-করা মেয়ে নয়, তবু ভারি মজা লাগছে। যে কড়া নিয়মের মধ্যে সে ছিল তার থেকে বেরিয়ে এসে কাজকর্ম সমস্তই ওর কাছে অনিয়মের মতোই ঠেকছে। এই সংসারের কর্মধারার ভিতরে ভিতরে ষে উদবেগ আছে, সাধনা আছে, সে তে ওর মনে নেই– সেই চিন্তার স্থাটি আছে ওর দিদির মধ্যে। তাই ওর