পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তুই বোন 8@@ आनं★ांछ् কিছু কাল এই-রকম যায়। লাগল চোখে ঘোর, মন উঠল আবিল হয়ে । নিজেকে স্বম্পষ্ট বুঝতে উৰ্মির সময় লেগেছে, কিন্তু এক দিন হঠাৎ চমকে উঠে বুঝলে । o মথুরদাদাকে উমি কী জানি কেন ভয় করত, এড়িয়ে বেড়াত তাকে। সেদিন মখুর সকালে দিদির ঘরে এসে বেলা দুপুর পর্যন্ত কাটিয়ে গেল। তার পরে দিদি উৰ্মিকে ডেকে পাঠালে। মুখ তার কঠোর, অথচ শাস্ত । বললে, “প্রতিদিন ওর কাজের ব্যাঘাত ঘটিয়ে কী কাগু করেছিস জানিস তা ?” উমি ভয় পেয়ে গেল। বললে, “কী হয়েছে দিদি ।” দিদি বললে, “মথুরদাদা জানিয়ে গেল, কিছু দিন ধরে তোর ভগ্নীপতি নিজে কাজ একেবারে দেখেন নি। জহরলালের উপরে ভার দিয়েছিলেন ; সে মালমসলায় দুহাত চালিয়ে চুরি করেছে। বড়ে বড়ো গুদামঘরের ছাদ একেবারে বাজরা; সেদিনকার বৃষ্টিতে ধরা পড়েছে মাল যাচ্ছে নষ্ট হয়ে । আমাদের কোম্পানির মস্ত নাম,তাই ওরা পরীক্ষা করে নি, এখন মস্ত অখ্যাতি এবং লোকসানের দায় পড়েছে দ্বাড়ে। মথুরদাদা স্বতন্ত্র হবেন।” উর্মির বুক ধকৃ করে উঠল, মুখ হয়ে গেল পাশের মতো। এক মুহূর্তে বিদ্যুতের আলোয় আপন মনের প্রচ্ছন্ন রহস্য প্রকাশ পেলে। স্পষ্ট বুঝলে, কখন অজ্ঞাতসারে তার মনের ভিতরটা উঠেছিল মাতাল হয়ে, ভালোমন্দ কিছুই বিচার করতে পারে নি। শশাঙ্কর কাজটাই যেন ছিল তার প্রতিযোগী, তারই সঙ্গে ওর আড়াআড়ি। কাজের থেকে ওকে ছাড়িয়ে নিয়ে সর্বদা সম্পূর্ণ কাছে পাবার জন্যে উমি কেবল ভিতরে ভিতরে ছট্‌ফট্‌ করত। কত দিন এমন ঘটেছে, শশাঙ্ক যখন স্বানে এমন সময় কাজের কথা নিয়ে লোক এসেছে ; উমি কিছু না ভেবে বলে পাঠিয়েছে, "বল গে, এখন দেখা হবে না।” ভয়, পাছে স্নান করে এসেই শশাঙ্ক আর অবকাশ না পায়, পাছে এমন করে কাজে জড়িয়ে পড়ে যে উর্মির দিনটা হয় ব্যর্থ। তার দুরন্ত নেশার সাংঘাতিক ছবিটা সম্পূর্ণ চোখে জেগে উঠল । তৎক্ষণাৎ দিদির পায়ের উপর আছাড় খেয়ে পড়ল। বারবার করে রুদ্ধপ্রায় কণ্ঠে বলতে লাগল, “তাড়িয়ে দাও তোমাদের ঘর থেকে আমাকে, এখনই দূর করে তাড়িয়ে দাও।” অাজ দিদি নিশ্চিত স্থির করে বসেছিল, কিছুতেই উৰ্মিকে ক্ষমা করবে না। মন গেল গলে । আস্তে আস্তে উৰ্মিমালার মাথায় হাত বুলিয়ে বললে, “কিছু ভাবিস নে, ঘা হয় একটা উপায় হবে।”