পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় । & e & কথাটা একেবারেই বাদ দিলে চলে না। পাখির বেদনাকে সত্য করিয়া দেখাইতে হইলে খাচার বদ্ধতা ও কঠিনতাকে পরিস্ফুট করিতেই হয়। জগতের যেখানেই ধর্মকে অভিভূত করিয়া আচার আপনি বড়ো হইয় উঠে সেখানেই মানুষের চিত্তকে সে রুদ্ধ করিয়া দেয়, এটা একটা বিশ্বজনীন সত্য । সেই রুদ্ধ চিত্তের বেদনাই কাব্যের বিষয়, এবং আনুষঙ্গিক ভাবে শুষ্ক আচারের কদৰ্যতা স্বতই সেইসঙ্গে ব্যক্ত হইতে থাকে। ধর্মকে প্রকাশ করিবার জন্ত, গতি দিবার জন্যই, আচারের স্থষ্টি ; কিন্তু কালে কালে ধর্ম যখন সেই-সমস্ত আচারকে নিয়মসংযমকে অতিক্রম করিয়৷ বড়ে৷ হইয়া.উঠে, অথবা ধর্ম যখন সচল নদীর মতে আপনার ধারাকে অন্য পথে লইয়৷ যায়, তখন পূর্বতন নিয়মগুলি অচল হইয়া শুষ্ক নদীপথের মতো পড়িয়া থাকে— বৃত্বত তখন তাহা তপ্ত মরুভূমি, তৃষাহর তাপনাশিনী স্রোতস্বিনী সম্পূর্ণ বিপরীত। সেই শুষ্ক পথটাকেই সনাতন বলিয়া সম্মান করিয়া নদীর ধারার সন্ধান যদি একেবারে পরিত্যাগ করা যায় তবে মানবাত্মাকে পিপাসিত করিয়া রাখা . হয়। সেই পিপাসিত মানবাত্মার ক্ৰন্দন কি সাহিত্যে প্রকাশ করা হইবে না, পাছে পুরাতন নদীপথের প্রতি অনাদর দেখানো হয় ? আপনি যাহা বলিয়াছেন সে কথা সত্য । সকল ধর্মসমাজেই এমন অনেক পুরাতন প্রথা সঞ্চিত হইতে থাকে যাহার ভিতর হইতে প্রাণ সরিয়া গিয়াছে। অথচ চিরকালের অভ্যাস-বশত মানুষ তাহাকেই প্রাণের সামগ্ৰী বলিয়া অঁাকড়িয়া থাকে – তাহাতে কেবলমাত্র তাহার অভ্যাস তৃপ্ত হয়, কিন্তু তাহার প্রাণের উপবাস ঘুচে না— এমনি করিয়া অবশেষে এমন একদিন আসে যখন ধর্মের প্রতিই তাহার অশ্রদ্ধা জন্মে— এ কথা ভুলিয়া যায় যাহাকে সে আশ্রয় করিয়াছিল তাহ ধৰ্মই নহে, ধর্মের পরিত্যক্ত আবর্জনা মাত্র । 啤 এমন অবস্থায় সকল দেশেই সকল কালেই মানুষকে কেহ-না-কেহ শুনাইয়াছে যে, আচারই ধর্ম নহে, বাহিকতায় অস্তরের ক্ষুধা মেটে না এবং নিরর্থক অনুষ্ঠান মুক্তির পথ নহে, তাহা বন্ধন। অভ্যাসের প্রতি আসক্ত মানুষ কোনো দিন এ কথা শুনিয়া খুশি হয় নাই এবং যে এমন কথা বলে তাহাকে পুরস্কৃত করে নাই— কিন্তু ভালো লাগুক আর না লাগুক এ কথা তাহাকে বারংবার শুনিতেই হুইবে । প্রত্যেক মানুষের একটা অহং আছে ; সেই অহংএর আবরণ হইতে মুক্ত হইবার জন্ত সাধকমাত্রের একটা ব্যগ্রতা আছে । তাহার কারণ কী। তাহার