পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আলমোড়া እbl&9|©ዓ রবীন্দ্র-রচনাবলী আঁধাব মুখোশ-পরা বাড়ি সামনে আছে খাড়া ; হা-করা-মুখ দুয়ারগুলো, নাইকো শব্দসাড়া । চেতলাতে একটা ধারে জানলাখানার ফাকে প্রদীপশিখা ছুঁচের মতো বিধছে আঁধারটাকে । বাকি মহল যত কালো মোটা ঘোমটা-দেওয়া দৈত্যনারীর মতো । বিদেশীর এই বাসাবাড়ি, কেউ-বা কয়েক মাস এইখানে সংসার পেতেছে, করছে বসবাস ; কাজকর্ম সাঙ্গ করি কেউবা কয়েক দিনে চুকিয়ে ভাড়া কোনখানে যায়, কেইবা তাদের চিনে । শুধাই আমি, “আছ কি কেউ, জায়গা কোথায় পাই ।” মনে হল জবাব এল, “আমরা নাই নাই ।” সকল দুয়োর জানলা হতে, যেন আকাশ জুড়ে ঝাকে ঝাকে রাতের পাখি শূন্যে চলল উড়ে । একসঙ্গে চলার বেগে হাজার পাখা তাই অন্ধকারে জাগায় ধ্বনি, “আমরা নাই নাই ।” আমি শুধাই, “কিসের কাজে এসেছ এইখানে ৷” জবাব এল, “সেই কথাটা কেহই নাহি জানে । যুগে যুগে বাড়িয়ে চলি নেই-হওয়াদের দল, বিপুল হয়ে ওঠে যখন দিনের কোলাহল সকল কথার উপরেতে চাপা দিয়ে যাই নাই, নাই, নাই ।” পরের দিনে সেই বাড়িতে গেলেম সকালবেলাছেলেরা সব পথে করছে। লড়াই- লড়াই খেলা, কাঠি হাতে দুই পক্ষের চলছে ঠকাঠকি । কোণের ঘরে দুই বুড়োতে বিষম বিকাব্যকিবাজিখেলায় দিনে দিনে কেবল জেতা হারা, দেনা-পাওনা জমতে থাকে, হিসাব হয় না। সারা । গন্ধ আসছে রান্নাঘরের, শব্দ বাসন-মাজার ; শূন্য বুড়ি দুলিয়ে হাতে ঝি চলেছে বাজার । একে একে এদের সবার মুখের দিকে চাই, কানে আসে রাত্ৰিবেলার “আমরা নাই নাই” ।