পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবীন প্ৰথম পর্ব বাসতী, হে ভুবনমোহিনী শুনেছি অলিমালা, ওরা বড়ো, ধিককার দিচ্ছে, ঐ ওপাড়ার মল্লের দল, উৎসবে তোমাদের চাপল্য ওদের ভালো লাগছে না । শৈবালপূজিত গুহান্ধারে কালো কালো শিলাখণ্ডের মতো তমিস্রগহন গাতীর্যে ওরা নিশ্চল হয়ে ভুকুটি করছে, নিঝরিণী ওদের সামনে দিয়ে বেরিয়ে পড়েছে এই আনন্দময় বিশ্বের আনন্দপ্রবাহ দিকে দিগন্তে বইয়ে দিতে, নাচে গানে কল্লোলে হিল্লোলে কলহাস্যে- চুৰ্ণ চুৰ্ণ সূর্যের আলো উদবোেল তরঙ্গভঙ্গের ছন্দে ছন্দে বিকীর্ণ করে দিতে। এই আনন্দা-আবেগের অন্তরে অন্তরে যে অক্ষয় শৌর্যের অনুপ্রেরণা আছে, সেটা ওদের শাস্ত্রবচনের বেড়ার বাইরে দিয়ে চলে গেল । ভয় কোরো না তোমরা ; যে রসরাজের নিমন্ত্রণে তোমরা এসেছি, তার প্রসন্নতা যেমন নেমেছে আমাদের নিকুঞ্জেী অন্তঃস্মিত গন্ধরাজমুকুলের প্রচ্ছন্ন গন্ধরেণুতে তেমনি নামুক তোমাদের কণ্ঠে কণ্ঠে, তোমাদের দেহলতার নিরুদ্ধ নাটনোৎসাহে । সেই যিনি সুরের গুরু, তার চরণে তোমাদের নৃত্যের অর্ঘ্য নিবেদন করে দাও । সুরের গুরু, দাও গো সুরের দীক্ষা একটা ফর্মােশ এসেছে বসন্ত-উৎসবে নতুন কিছু চাই- কিন্তু যাদের রসবেদনা আছে তারা বলছে, আমরা নতুন চাই নে, আমরা চাই নবীনকে । তারা বলে, মাধবী বছরে বছরে সাজ বদলায় না, অশোক পলাশ পুরাতন রঙেই বারে বারে রঙিন । এই চিরপুরাতন ধরণী সেই চিরপুরাতন নবীনের দিকে তাকিয়ে বলছে, “লাখ লাখ যুগ হিয়ে হিয়ে রাখালু তবু হিয়া জুড়েন না গেল।” সেই নবীনের উদ্দেশে CNN in Vy (ps we আন গো তোরা কার কী আছে অশোকবনের রঙমহলে আজ লাল রঙের তানে তানে পঞ্চমর্যাগে সানাই বাজিয়ে দিলে, কুজীবনের বীথিাকায় আজ সীেরভের অবরিত দানসত্র। আমরাও তো শূন্যহাতে আসি নি। দানের জোয়ার যখন লাগে অতল জলে তখন ঘাটে ঘাটে দানের বোঝাইতরী রশি খুলে দিয়ে ভেসে পড়ে । আমাদের ভরা নীেকো দখিন হাওয়ায় পাল তুলে সাগর-মুখ্যো হল, সেই কথাটা কণ্ঠ খুলে জানিয়ে দাও । ফাগুন, তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি-যে দান ভরে দাও একেবারে ভরে দাও, কোথাও কিছু সংকোচ না থাকে। পূর্ণের উৎসবে দেওয়া আর পাওয়া একই কথা । কর্নার এক প্রান্তে পাওয়া রয়েছে অত্ৰভেদী শিখরের দিক থেকে, আর-এক প্রান্তে দেওয়া রয়েছে অতল স্পর্শ সাগরের দিকে, এর মাঝখানে তো কোনো বিচ্ছেদ নেই। অন্তহীন পাওয়া আর অন্তহীন দেওয়ার আবর্তন নিয়ে এই বিশ্বৰ । গানের ডালি ভরে দে গো উষার কোলে মধুরিমা, দেখো, দেখো, চাঁদের তরুণীতে আজ পূর্ণতা পরিপূজিত। কতদিন ধরে এক তিথি থেকে আর-এক তিথিতে এগিয়ে এগিয়ে আসছে। নন্দনকান থেকে আলোর পরিজাত ভরে নিয়ে এলকোন মাধুরীর মহাশ্বেতা সেই ডালি কোলে নিয়ে বসে আছে ; ক্ষণে ক্ষণে রাজহংসের ডানার মতো