পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NRSR8 রবীন্দ্র-রচনাবলী দ্বিতীয় পর্ব বেদনা কী ভাষায় রে মর্মে মর্মর গুজরি বাজে । সে বেদনা সমীরে সমীরে সঞ্চারে, চঞ্চল বেগে বিশ্বে দিল দোলা । দিবানিশা আহি নিদ্রাহর বিরহে তব নন্দনবন-অঙ্গন-স্বারে, মনোমোহন বন্ধু, আকুল প্ৰাণে পারিজাতমালা সুগন্ধ হানে । বিদায়দিনের প্রথম হাওয়াটা এবার উৎসবের মধ্যে নিঃশ্বাসিত হয়ে উঠল । এখনো কোকিল ডাকছে, এখনো বকুলবনের সম্বল অজস্ৰ, এখনো আম্রমঞ্জরীর নিমন্ত্রণে মৌমাছিদের আনাগোনা, কিন্তু তবু এই চঞ্চলতার অন্তরে অন্তরে একটা বেদনা শিউরিয়ে উঠল। সভার বীণা বুঝি নীরব হবে, পথের একতারায় এবার সুর বাধা হচ্ছে। দূর দিগন্তের নীলিমায় দেখা যায় অশ্রীর আভাস- অবসানের গোধূলিছায়া নােমছে। চলে যায় মারি হয় বসন্তের দিন হে সুন্দর, যে কবি তোমার অভিনন্দন করতে এসেছিল তার ছুটির দিন এল । তার প্রণাম তুমি নাও ! যে গানগুলি এতদিন গ্ৰহণ করেছি। সেই তার আপনি গানের বন্ধনেই সে বাধা রইল তোমার দ্বারে- তোমার উৎসবলীলায় সে চিরদিন রয়ে গেল তোমার সাথের সাথি । তোমাকে সে তার সুরের রাখী পরিয়েছে- তার চিরপরিচয় তোমার ফুলে ফুলে, তোমার পদপাত।কম্পিত শ্যামল শম্পবীথিকায় । 制 বসন্তে বসন্তে তোমার কবিরে দাও ডাক ওর ভয় হয়েছে সব কথা বলা হল না বুঝি, এ দিকে বসন্তর পালা তো সাঙ্গ হয়ে এল । ওর মল্লিকাবনে এখনি তো পাপড়িগুলি সব পড়বে ঝরে- তখন বাণী পাবে কোথায় । ত্বরা কর গো, ত্বরা কর । বাতাস তপ্ত হয়ে এল, এই বেলা রিক্ত হবার আগে তোর শেষ অঞ্জলি পূর্ণ করে দে ; তার পরে আছে করুণ ধূলি, তার আঁচলে সব করা ফুলের বিরাম । যখন মল্লিকাবনে প্ৰথম ধরেছে। কলি সুন্দরের বীণার তারে কোমল গান্ধারে মীড় লেগেছে। আকাশের দীর্ঘনিশ্বাস বনে বনে হয়। হায় করে উঠল, পাতা পড়ছে ঝরে ঝরে । বসন্তের ভূমিকায় ঐ পাতাগুলি একদিন শাখায় শাখায় আগমনীর গানে তাল দিয়েছিল, তারাই আজ যাবার পথের ধুলিকে ঢেকে দিল, পায়ে পায়ে প্ৰণাম করতে লাগল বিদায়াপথের পথিককে । নবীনকে সন্ন্যাসীর বেশ পরিয়ে দিলে ; বললে, তোমার উদয় সুন্দর, তোমার অন্তও সুন্দর হােক । করা পাতা গো, আমি তোমারি দলে মন থাকে সুপ্ত, তখনো দ্বার থাকে খোলা, সেইখান দিয়ে করে আনাগোনা হয় ; উত্তরায়ের গন্ধ আসে ঘরের মধ্যে, ভূঁইচাপা ফুলের ছিন্ন পাপড়িগুলি লুটিয়ে থাকে তার যাওয়ার পথে ; তার বীণা থেকে বসন্তবাহারের রেশটুকু কুড়িয়ে নেয় মধুকরগুজরিত দক্ষিণের হাওয়া ; কিন্তু জানতে পাই নে, সে এসেছিল । জেগে উঠে দেখি তার আকাশপারের মালা সে পরিয়ে গিয়েছে, কিন্তু এ-যে বিরহের माछा | কখন দিলে পর্যায়ে বনবন্ধুর যাবার সময় হল, কিন্তু হে বনস্পতি শাল, অবসানের দিন থেকে তুমি অবসাদ ঘুচিয়ে দিলে । উৎসবের শেষ বেলাকে তোমার অক্লান্ত মজয়ী ঐশ্বর্যে দিলে ভরিয়ে । নবীনের শেষ জয়ধ্বনি