পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓ፲፱€ንጂ SS (? সঙ্গে তো পেরে ওঠবার জো নেই! যেটা ধরবে সে আর কিছুতেই ছাড়বে না !” অমল কহিল, “দাদাকে একবার দেখাতে হবে ।” শুনিয়া চারু পান সাজা ফেলিয়া আসন হইতে বেগে উঠিয়া পড়িল ; খাতা কাড়িবার চেষ্টা করিয়া কহিল, “না, তাকে শোনাতে পাবে না । ঠাকে যদি আমার লেখার কথা বল তা হলে আমি আর এক অক্ষয় লিখব না ।” অমল । বউঠান, তুমি ভারি ভুল বুঝছ। দাদা মুখে যাই বলুন, তোমার লেখা দেখলে খুব খুশি হবেন । চারু । তা হোক, আমার খুশিতে কাজ নেই । চারু প্ৰতিজ্ঞা করিয়া বসিয়াছিল। সে লিখিবে- অমলকে আশ্চর্য করিয়া দিবো ; মন্দার সহিত তাহার যে অনেক প্ৰভেদ এ কথা প্ৰমাণ না করিয়া সে ছাড়িবে না । এ কয়দিন বিস্তর লিখিয়া সে ছিডিয়া ফেলিয়াছে । যাহা লিখিতে যায় তাহা নিতান্ত অমলের লেখার মতো হইয়া উঠে ; মিলাইতে গিয়া দেখে এক-একটা অংশ আমলের রচনা হইতে প্ৰায় অবিকল উদধূত হইয়া আসিয়াছে। সেইগুলিই ভালো, বাকিগুলা কাচা । দেখিলে আমল নিশ্চয়ই মনে মনে হাসিবে, ইহাই কল্পনা করিয়া চারু সে-সকল লেখা কুটি কুটি করিয়া ছিডিয়া পুকুরের মধ্যে ফেলিয়া দিয়াছে, পাছে তাহার একটা খণ্ডও দৈবাৎ আমলের হাতে আসিয়া পড়ে । প্ৰথমে সে লিখিয়ছিল ‘শ্রাবণের মেঘ’ । মনে করিয়াছিল, ‘ভাবাশ্রািজলে অভিষিক্ত খুব একটা নুতন লেখা লিখিয়াছি।’ হঠাৎ চেতনা পাইয়া দেখিল জিনিসটা আমলের ‘আষাঢ়ের চাদ'-এর এপিঠ-ওপিঠ মাত্র । অমল লিখিয়াছে, ‘ভাই চাদ, তুমি মেঘের মধ্যে চোরের মতো লুকাইয়া বেড়াইতেছ। কেন " চারু লিখিয়াছিল, “সখী কাদম্বিনী, হঠাৎ কোথা হইতে আসিয়া তোমার নীলাঞ্চলের তলে চাদকে চুরি করিয়া পলায়ন করিতেছ” ইত্যাদি । কোনোমতেই অমলের গণ্ডি এড়াইতে না পারিয়া অবশেষে চারু রচনার বিষয় পরিবর্তন করিল। চাদ, মেঘ, শেফালি, বউ-কথা-কও, এ-সমস্ত ছাডিয়া সে “কালীতলা বলিয়া একটা লেখা লিখিল । তাহাদের গ্রামে ছায়ায়-অন্ধকার পুকুরটির ধারে কালীর মন্দির ছিল ; সেই মন্দিরটি লইয়া তাহার বাল্যকালের কল্পনা ভয় ঔৎসুক, সেই সম্বন্ধে তাহার বিচিত্র স্মৃতি, সেই জাগ্ৰত ঠাকুরানীর মাহাত্ম্য সম্বন্ধে গ্রামে চিরপ্রচলিত প্ৰাচীন গল্প- এই-সীমান্ত লইয়া সে একটি লেখা লিখিল । তাহার আরম্ভ-ভাগ অমলের লেখার ছাদে কাব্যাড়ম্বরপূর্ণ হইয়াছিল, কিন্তু খানিকট অগ্রসর হইতেই তাহার লেখা সহজেই সরল এবং পল্লীগ্রামের ভাষা-ভঙ্গি-আভাসে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছিল । এই লেখাটা অমল কাডিয়া লইয়া পড়িল । তাহার মনে হইল, গোড়ার দিকটা বেশ সরস হইয়াছে, কিন্তু কবিত্ব শেষ পর্যন্ত রক্ষিত হয় নাই । যাহা হউক, প্ৰথম রচনার পক্ষে লেখিকার উদ্যম প্ৰশংসনীয় । চারু কহিল, “ঠাকুরপো, এসে আমরা একটা মাসিক কাগজ বের করি । কী বল ।” অমল । অনেকগুলি রৌপ্যচক্র না হলে সে কাগজ চলবে কী করে । চারু । আমাদের এ কাগজে কোনো খরচ নেই। ছাপা হবে না তো- হাতের অক্ষরে লিখব । তাতে তোমার আমার ছাড়া আর কারও লেখা বেরবে না, কাউকে পড়তে দেওয়া হবে না । কেবল দু কপি করে বের হবে ; একটি তোমার জন্যে, একটি আমার জন্যে । কিছুদিন পূর্বে হইলে অমল এ প্রস্তাবে মাতিয়া উঠিত ; এখন গোপনতার উৎসাহ তাহার চলিয়া গৈছে .। এখন দশজনকে উদ্দেশ না করিয়া কোনো রচনায় সে সুখ পায় না। তবু সাবেক কালের ঠাট বজায় রাখিবার জন্য উৎসাহ প্ৰকাশ করিল। কহিল, “সে বেশ মজা হবে ।” চারু কহিল, “কিন্তু প্ৰতিজ্ঞা করতে হবে, আমাদের কাগজ ছাড়া আর কোথাও তুমি লেখা বের (७ viामद न ।।” অমল । তা হলে সম্পাদকরা যে মেয়েই ফেলবে ।