পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 G NR রবীন্দ্র-রচনাবলী সপ্তদশ পরিচ্ছেদ সুকুমারী। দেখো দেখি, এখন সতীশ কেমন পরিশ্রম করে কাজকর্ম করছে। দেখো, অতবড়ো সাহেব-বাবু আজকাল পুরানো কালো আলপাকার চাপিকানের উপরে কেঁচানো চাদর বুলিয়ে কেমন নিয়মিত আপিসে যায় ! শশধর । বড়োসাহেব সতীশের খুব প্রশংসা করেন । সুকুমারী। দেখো দেখি, তুমি যদি তোমার জমিদারিটা তাকে দিয়ে বসতে তবে এতদিনে সে টাই-কলার-জন্তা-ছড়ি কিনেই সেটা নিলামে চড়িয়ে দিত । ভাগ্যে আমার পরামর্শ নিয়েছ, তাই তো সতীশ মানুষের মতো হয়েছে। শশধর । বিধাতা আমাদের বুদ্ধি দেন নি। কিন্তু স্ত্রী দিয়েছেন, আর তোমাদের বুদ্ধি দিয়েছেন তেমনি সঙ্গে সঙ্গে নির্বোধি স্বামীগুলোকেও তোমাদের হাতে সমর্পণ করেছেন- আমাদেরই জিত । সুকুমারী । আচ্ছা আচ্ছা, ঢের হয়েছে, ঠাট্টা করতে হবে না ! কিন্তু সতীশের পিছনে এতদিন যে টাকাটা ঢেলেছ সে যদি আজ থাকত- তবে— শশধর । সতীশ তো বলেছে, কোনো-একদিন সে সমস্তই শোধ করে দেবে । সুকুমারী । সে যত শোধ করবে। আমার গায়ে রইল । সে তো বরাবরই ঐরকম লম্বাচোড়া কথা বলে থাকে । তুমি বুঝি সেই ভরসায় পথ চেয়ে বসে আছ । শশধর । এতদিন তো ভরসা ছিল, তুমি যদি পরামর্শ দাও তো সেটা বিসর্জন দিই । সুকুমারী । দিলে তোমার বেশি লোকসান হবে না, এই পর্যন্ত বলতে পারি। ঐ-যে তোমার সতীশবাবু আসছেন । চাকরি হয়ে অবধি একদিনও তো আমাদের চৌকাঠ মাডান নি, এমনি তার কৃতজ্ঞতা ! আমি যাই । সতীশ । মাসিম, পালাতে হবে না । এই দেখো, আমার হাতে অস্ত্রশস্ত্ৰ কিছুই নেই- কেবল খানকয়েক নোট আছে । শশধর । ইস ! এ যে একতাডা নোট ! যদি আপিসের টাকা হয় তো এমন করে সঙ্গে নিয়ে বেড়ানো ভালো হচ্ছে না, সতীশ । সতীশ । আর সঙ্গে নিয়ে বেড়াব না । মাসিমার পায়ে বিসর্জন দিলাম ! প্ৰণাম হই, মাসিমা । বিস্তর অনুগ্রহ করেছিলে— তখন তার হিসাব রাখতে হবে মনেও করি নি, সুতরাং পরিশোধের অঙ্কে কিছু ভুলচুক হতে পারে । এই পনেরো হাজার টাকা গুনে নাও ! তোমার খোকার পোলাও-পরমান্নে একটি তণ্ডুলকণাও কম না পড়ুক । শশধর । এ কী কাণ্ড সতীশ ! এত টাকা কোথায় পেলে । সতীশ । আমি গুনােচট আজ ছয় মাস আগাম খরিদ করে রেখেছি- ইতিমধ্যে দর চড়েছে ; তাই মুনফা পেয়েছি । শশধর । সতীশ. এ যে জুয়াখেলা । সতীশ । খেলা এইখানেই শেষ- আর দরকার হবে না । শশধর । তোমার এ টাকা তুমি নিয়ে যাও, আমি চাই না । সতীশ । তোমাকে তো দিই নি মেসোেমশায় । এ মাসিমার ঋণশোধ । তোমার ঋণ কোনােকালে শোধ করতে পারব না । শশধর । কী সুকু, এ টাকাগুলো— সুকুমারী। গুনে খাতাঞ্চির হাতে দাও-না- ঐখানেই কি ছড়ানো পড়ে থাকবে । শশধর । সতীশ, খেয়ে এসেছি তো ? সতীশ । বাড়ি গিয়ে খাব ।