পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

邻gö硬 89) বই বন্ধ করিয়া ফেলিত এবং অকারণে দ্রুতপদে রাস্তায় ঘুরিয়া আসিত । কলেজে লেকচারের নোটের মাঝে মাঝে খুব বড়ো বড়ো ফাক পড়িত এবং মাঝে মাঝে যে-সমস্ত আঁকজোক পড়িত তাহার সঙ্গে প্রাচীন ঈজিপ্টের চিত্রলিপি ছাড়া আর কোনো বর্ণমালার সাদৃশ্য ছিল না। হরলাল বুঝিল, এ-সমস্ত ভালো লক্ষণ নয়। পরীক্ষায় সে যদি-বা পাস হয় বৃত্তি পাইবার কোনো সম্ভাবনা নাই। বৃত্তি না পাইলে কলিকাতায় তাহার একদিনও চলিবে না। ও দিকে দেশে মাকেও দু-চার টাকা পাঠানো চাই। নানা চিন্তা করিয়া চাকরির চেষ্টায় বাহির হইল। চাকরি পাওয়া কঠিন, কিন্তু না পাওয়া তাহার পক্ষে আরো কঠিন ; এইজন্য আশা ছাড়িয়াও আশা ছাড়িতে পারিল না । হরলালের সৌভাগ্যক্রমে একটি বড়ো ইংরেজ সদাগরের আপিসে উমেদারি করিতে গিয়া হঠাৎ সে বড়োসাহেবের নজরে পড়িল । সাহেবের বিশ্বাস ছিল, তিনি মুখ দেখিয়া লোক চিনিতে পারেন । হরলালকে ডাকিয়া তাহার সঙ্গে দু-চার কথা কহিয়াই তিনি মনে মনে বলিলেন, এ লোকটা চলিবে । জিজ্ঞাসা করিলেন, “কাজ জানা আছে ?” হিরলাল কহিল, “না ।” “জামিন দিতে পরিবে ?” তাহার উত্তরেও “না।” “কোনো বড়োলোকের কাছ হইতে সাটিফিকেট আনিতে পার ?” কোনো বড়োলোককেই সে জানে না । শুনিয়া সাহেব আরো যেন খুশি হইয়াই কহিলেন, “আচ্ছা বেশ, পঁচিশ টাকা বেতনে কাজ আরম্ভ করো, কাজ শিখিলে উন্নতি হইবে।” তার পরে সাহেব তাহার বেশভূষার প্রতি দৃষ্টি করিয়া কহিলেন, “পনেরো টাকা আগাম দিতেছি- আপিসের উপযুক্ত কাপড় তৈরি করাইয়া লইবে ।” কাপড় তৈরি হইল, হরলাল আপিসেও বাহির হইতে আরম্ভ করিল। বড়োসাহেব তাহাকে ভূতের মতো খাটাইতে লাগিলেন । অন্য কেরানিরা বাড়ি গেলেও হরলালের ছুটি ছিল না । এক-একদিন সাহেবের বাড়ি গিয়াও তাহাকে কাজ বুঝাইয়া দিয়া আসিতে হইত। এমনি করিয়া কাজ শিখিয়া লইতে হরলালের বিলম্ব হইল না । তাহার সহযোগী কেরানিরা তাহাকে ঠকাইবার অনেক চেষ্টা করিল, তাহার বিরুদ্ধে উপরওয়ালাদের কাছে লাগালাগিও করিল, কিন্তু এই নিঃশব্দ নিরীহ সামান্য হরলালের কোনো অপকার করিতে পারিল না । যখন তাহার চল্লিশ টাকা মাহিন হইল, তখন হরলাল দেশ হইতে মাকে আনিয়া একটি ছোটোখাটো গলির মধ্যে ছোটােখাটাে বাড়িতে বাসা করিল। এতদিন পরে তাহার মার দুঃখ ঘুচিল । মা বলিলেন, “বাবা, এইবার বউ ঘরে আনিব।” হরলাল মাতার পায়ের ধূলা লইয়া বলিল, “ম, ঐট মাপ করিতে হইবে ।” মাতার আর-একটি অনুরোধ ছিল । তিনি বলিলেন, “তুই যে দিনরাত তোর ছাত্ৰ বেণুগোপালের গল্প করিস, তাহাকে একবার নিমন্ত্ৰণ করিয়া খাওয়া। তাহাকে আমার দেখিতে ইচ্ছা করে।” হরলাল কহিল, “মা, এ বাসায় তাহাকে কোথায় বসাইবে । রোসো, একটা বড়ো বাসা করি, তাহার পরে তাহাকে নিমন্ত্ৰণ করিব।” Գ হরলালের বেতনবৃদ্ধির সঙ্গে ছোটাে গলি হইতে বড়ো গলি ও ছোটাে বাড়ি হইতে বড়ো বাড়িতে তাহার বাস-পরিবর্তন হইল। তবু সে কী জানি কী মনে করিয়া, অধরলালের বাড়ি যাইতে বা বেণুকে নিজের বাসায় ডাকিয়া আনিতে কোনোমতেই মন স্থির করিতে পারিল না । হয়তো কোনোদিনই তাহার সংকোচ ঘুচিত না। এমন সময়ে হঠাৎ খবর পাওয়া গেল বেণুর মা মারা গিয়াছেন। শুনিয়া মুহুর্ত বিলম্ব না করিয়া সে অধরলালের বাড়ি গিয়া উপস্থিত হইল। এই দুই অসমবয়সী বন্ধুতে অনেকদিন পরে আবার একবার মিলন হইল। বেণুর অলীেচের সময় পার হইয়া গেলে- তবু এ বাড়িতে হরলালের যাতায়াত চলিতে লাগিল। কিন্তু ঠিক তেমনটি আর কিছুই নাই। বেণু এখন বড়ো হইয়া উঠিয়া অঙ্গুষ্ঠ ও তর্জনী -যোগে তাহার নূতন গোফের রেখার